ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যুদ্ধ চাই না, তবে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
যুদ্ধ চাই না, তবে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, বন্ধুত্ব চাই।

তবে আক্রান্ত হলে, তা মোকাবিলা করতে হবে, সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং সেভাবে আমরা তৈরি থাকতে চাই।

বুধবার (২৮ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সেনাবাহিনীর আটটি ইউনিট/সংস্থার পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

আমাদের পররাষ্ট্র নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। যা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। এ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়েই আমরা বাংলাদেশকে আর্থসামাজিকভাবে উন্নত করতে চাই। কিন্তু যদি কখনো আমরা আক্রান্ত হই, তা মোকাবিলা করার শক্তি যেন আমরা অর্জন করতে পারি, সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং সেভাবে আমরা তৈরি থাকতে চাই, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, আবার বলবো, আমরা শান্তি চাই, বন্ধুত্ব চাই, বৈরিতা চাই না, যুদ্ধ চাই না। কারণ যুদ্ধের যে ভয়াবহ রূপ, তা আমার নিজের চোখে দেখা আছে। আমরাও ভুক্তভোগী। আর সেই ধরনের সংঘাতে আমরা জড়িত হতে চাই না। শান্তির পথ ধরে আমরা প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে চাই।  

সেনা সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে দেশের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে সর্ব প্রথম দরকার পেশাদারিত্ব। আর এ পেশাদারিত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সবাইকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সেভাবেই মানুষের আস্থা অর্জন করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ভেতরের মূল চালিকা শক্তিগুলো অর্থ্যাৎ ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পারিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্য পরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনাদের স্বীয় কর্তব্য যথাযথভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাবেন, সেটাই আশা করি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের সশস্ত্র বাহিনী। সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী। এদেশে উন্নতি হলে আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যদের পরিবারেরই উন্নতি হবে। সে কথা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অবকাঠামো নির্মাণে আমাদের সশ্রস্ত্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

করোনাসহ বিভিন্ন দুযোর্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বিশেষ করে করোনাকালে তারা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা করে বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।


তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেখানেই যান, সামাজিক কাজ করেন, মানুষকে সাহায্য করেন।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে নিজের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে আমি সব সময় সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, যেনো প্রত্যেক সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন মান উন্নত হয়, সারা বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান যেনো উন্নত হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমরা সেনাবাহিনীকে বিশ্বের দরবারে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীতে রূপান্তর করার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করি। ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেছি। এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দু’টি পদাতিক ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন ছাড়াও ১০টি ব্যাটালিয়ন, এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি, এনসিও’স একাডেমি ও বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠা করি।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি আজ বিশ্বে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কুমিল্লা, বগুড়া ও সৈয়দপুর সেনানিবাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, সাভার এবং সিলেট সেনানিবাসে একটি করে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউট স্থাপন, সিএমএইচগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি পাঁচটি আর্মি মেডিক্যাল কলেজ এবং তিনটি নার্সিং কলেজ স্থাপন, রামু ও সিলেট সেনানিবাসে পর্যাপ্ত সুবিধা সম্বলিত দু’টি সিএমএইচ নির্মাণ কাজ চলছে, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাজোয়া এবং আর্টিলারি কোরের জন্য আধুনিক গান ও মিসাইল কেনা, পদাতিক বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ইনফ্যান্ট্রি গেজেট কেনা, আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজনসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।

আগামী শীতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ সবাইকে করোনা মোকাবিলায় সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস, শীত কাল আসছে, করোনার আরেকটা ধাক্কা আসতে পারে, সে জন্য সদা প্রস্তুত থেকে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা থেকে মুক্ত থেকে আপনারা আপনাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন সেটাই আশা করি। সবাই সুস্থ থাকুন।  

অনুষ্ঠানে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে অবস্থিত শেখ হাসিনা সেনানিবাস প্রান্তে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমদসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে দেশের দক্ষিণবঙ্গের একমাত্র সেবানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পায়রা নদীর তীরে অবস্থিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমণ্ডিত এ সেনানিবাসটি প্রায় ১৫শ’ ৩২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

এ অনুষ্ঠানে সদর দপ্তর ৭ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেড (চট্টগ্রাম), সদর দপ্তর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড (সিলেট), সদর দপ্তর ২৮ পদাতিক ব্রিগেড, ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৬৬ ইস্ট বেঙ্গল, ৪৩ বীর, ৪০ এসটি ব্যাটালিয়ন এবং ১২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
এমইউএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।