ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নদী ড্রেজিংয়ের বালু বিক্রির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
নদী ড্রেজিংয়ের বালু বিক্রির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্কুলের সামনে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে নদী খনন করে উত্তোলন করা বালু দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গাসহ আশপাশের খালি জায়গা ভারাটে জন্য টাকা নিয়ে কাজ সম্পন্ন না করার অভিযোগ উঠেছে পাকশিমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারিভাবে নদী খনন করা বালু আশপাশ এলাকার কারো প্রয়োজনে বা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ওই স্থানে বালু ভরাট করার নির্দেশ দিয়ে থাকে।

কিন্তু সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়নের কালিশিমুল গ্রামে ড্রেজিংকৃত সরকারি বালু দিয়ে একটি স্কুলের ৩৩ শতক জায়গাসহ মোট ১১৫ শতক জায়গা ভরাটের জন্য ১৯ জনের কাছ থেকে  ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা নেন ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, প্রতি শতক জায়গা ভরাটের জন্য চেয়ারম্যানকে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ভরাট না করার ফলে ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা চাইতে গেলে উল্টো তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন তিনি। প্রভাবশালী হওয়াই গ্রামের নিরীহ লোকজন ভয়ে কিছু বলতেও পারছেন না।  

প্রতিবাদে এলাকাবাসী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কালিশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১০ কিলোমিটার নৌপথ খননের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী অর্থ বছরে অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে।

সরেজমিন ওই গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বসতবাড়ির আশপাশের নিচু জায়গা খালি পড়ে আছে। বর্ষাকালের পানি দীর্ঘদিন জমে থাকায় দিন দিন গর্ত আরো বড় হচ্ছে। এতে বাড়ির সীমানা প্রাচীরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ফলে তাদের সারা বছরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

কথা হয় ভুক্তভোগী বৃদ্ধা মোজেরা বেগমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনার মধ্যে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বামী অচল হয়ে আছে। একমাত্র ছেলে সংসার চালাচ্ছে দিনমজুরি দিয়ে। তারপরও ঋণ করে চার শতক জায়গার জন্য চেয়ারম্যানকে বিশ হাজার টাকা দিছি জায়গাটি বালু দিয়ে ভরাট করে দেওয়ার জন্য। অনেকবার চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম কোনো কথাই শোনে নাই। উল্টো ধমক দিয়ে বিদায় করে দেন।

আরেক ভুক্তভোগী কৃষক মনসুর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি কালা মিয়া কবিরাজের মাধ্যমে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে নয় শতক জায়গা ভরাটের জন্য পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা দিয়েছি। জায়গা ভরাট হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে অস্বীকার করছেন।

কালিশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল কমিটির সভাপতি নরুল ইসলাম ও এসএমসি কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় হাজী দুলাল মিয়ার মাধ্যমে কালা মিয়া কবিরাজ ও চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে স্কুলের ৩৩ শতাংশসহ ১১৫ শতাংশ জায়গা ভরাটের চুক্তি হয়। সে জন্য চেয়ারম্যানকে চার লাখ ৩২ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু যথাযথভাবে মাটি ভরাট করা হয়নি।  

সরকারি বালু বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে পাকশিমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ড্রেজিং করা বালু ও টাকা নেওয়ার ব্যাপারে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। সামনে নির্বাচনে যেন আমি নৌকার নমিনেশন না পাই সে জন্য এমন প্রচারণা করা হচ্ছে।  

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএস এম মোছা বাংলানিউজকে বলেন, ড্রেজিংয়ের বালু ভরাটের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত কোনো নির্দেশনা আমার কাছে নেই। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিস্তারিত বলতে পারবে।

ড্রেজিংয়ের বালু ভরাটের নীতিমালা সম্পর্কে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা রঞ্জন চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, বালু ভরাটের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিচু জায়গা ভরাটের পর ব্যক্তি মালিকাধীন জায়গা ভরাট হবে। এ জন্য কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না। ভরাট বাবদ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।