ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গাভীন গরুর মাংস বিক্রি, প্রতিবাদ করায় কসাইয়ের রোষানলে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
গাভীন গরুর মাংস বিক্রি, প্রতিবাদ করায় কসাইয়ের রোষানলে কসাইখানা। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার কসাইখানায় অসুস্থ ও গাভীন গরু-ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কসাইদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে ভোক্তাদের।

জানা গেছে, জেলা সদরের পৌর এলাকার নিউমার্কেট, নতুনহাট, বটতলাহাটের কসাইখানায় জবাইয়ের আগে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ সুযোগে কতিপয় অসাধু কসাই বেশি মুনাফার লোভে অসুস্থ ও গাভীন গরু-ছাগল কম দামে কিনে এর মাংস বিক্রি করছেন।  

গত শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) শহরের বালিগ্রামস্থ পৌর কসাইখানায় একটি গাভীন গরু জবাই করে মাইকিং করে কম দামে মাংস বিক্রি করা হয়। পরের দিন শনিবার সকালে কসাইখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভাগাড়ে একটি বস্তায় মৃত বাছুর উদ্ধার করে এলাকাবাসী। এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক এর ভিডিও ধারণ করে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শহরবাসী।

সূত্র মতে, সপ্তাহের শুক্র, শনি, মঙ্গল ও বুধবার ১৫ থেকে ২০টি গরু-ছাগল জবাই হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর কসাইখানায়। জবাই করা এসব গরুর অধিকাংশই অসুস্থ। বিশেষ করে শুক্রবার ৮ মাসের গাভীন গরু জবাই করার পর নিউমার্কেটে মাংস বিক্রির পরেরদিন শনিবার মৃত বাছুর পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। এ সময় এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো কসাইরাই প্রতিবাদকারীদের হুমকি দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুবেল, গিনি বেগমসহ আরো কয়েকজন বলেন, পৌর কসাইখানার পাশের ভাগাড়ে শনিবার সকালে মৃত বাছুরটি একটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখায় কুকুরগুলো বস্তা ছিঁড়ে বাছুরটিকে বের করে খেতে থাকে। পরে জানা যায়, ৮ মাসের গাভীন গরুকেই সেদিন জবাই করে শহরের নিউমার্কেটে কম মূল্যে মাইকিং করে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে গরুটি কার কাছ থেকে কেনা হয়েছে ও কোন কসাই এ কাজ করেছে তা এখনও জানা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এর আগেও এমনভাবে অসুস্থ ও গাভীন গরু-ছাগল জবাই করা হয়েছে। মাঝেমধ্যেই এমন খবর পেলেও কসাইদের বিরুদ্ধে বলতে গেলে উল্টো তারাই বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।

মিজানুর রহমান জানান, শনিবার মৃত বাছুর উদ্ধারের পর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর বারেক আলী, মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মাসকুরাকে জানানো হয়েছে সেইসঙ্গে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।  

কসাইখানার নৈশপ্রহরী মনিরুল ইসলাম বলেন, ৭-৮ বছর ধরে এখানে নাইট গার্ড হিসেবে ও কসাইখানা ধোয়া মোছার কাজ করি। গরু জবাইয়ের সময় আমি বাইরে থাকি এবং ডাক্তার, পৌরসভার ইন্সপেক্টর ও মৌলভী ভেতরে থাকে। আমিও শুনলাম শুক্রবার রাতে জবাই করা গরুর পেটে ৮ মাসের বাছুর ছিলো, যা এই এলাকার লোকজনের কাছে জেনেছি। বিষয়টি যেহেতু ঘরের মধ্যে হয়েছে, আর আমি বাইরে ছিলাম তাই আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।

তবে এ ঘটনা অস্বীকার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্রতিনিধি ও পৌর কসাইখানার পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, সেদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কসাইখানায় আমি উপস্থিত হয়। ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুমতি পেলেই তার উপস্থিতিতে পশু জবাই করা হয়। পরে মার্কেটে বাজারজাত করার উদ্দেশে মাংস নিয়ে যাওয়া হয়। আমি শুধু পৌরসভার একজন প্রতিনিধি হিসেবে সিলমোহর দেই। এছাড়া আর কিছু জানি না, কারণ পশু অসুস্থ বা গাভীন কি না তা পরীক্ষা করেন ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধি।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর কসাইখানায় উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধি ও উপ-সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ গাভীন ও অসুস্থ পশু জবাই কাজে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে কসাইখানায় ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষার কাজ করে আসছি। পরীক্ষায় অসুস্থ বা গাভীন পশু ধরা পড়লে জবাই করার অনুমতি দেই না। কিন্তু আমি চলে আসার পরেও আমার চোখ এড়িয়ে কসাইরা গরু জবাই করে। আমি চলে আসার পর তখনই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।

আর জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অসুস্থ বা গাভীন পশু জবাই করা আইনগতভাবে গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি নিয়ে আগামীতে যথাযথভাবে তদারকি করা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।