ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে দেবী দুর্গার বিদায়ে করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
সিলেটে দেবী দুর্গার বিদায়ে করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে

সিলেট: এবার উৎসবহীন ছিল দুর্গাপূজা। মন্দিরে মন্দিরে ছিল না জনাকীর্ণতা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হয় দুর্গাপূজা।

সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট নগরের ক্বীনব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদীতে দেবীর বিসর্জনের দিনও ছিল শোভাযাত্রাহীন। কোনো ধরনের কোলাহল ছাড়াই বিসর্জন সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষায় দেবীর কাছে আরাধনা করেছেন পূজারীরা।  

এবার দেবীর মর্ত্যলোক থেকে দোলায় আগমন ঘটে। শাস্ত্র মতে, দোলায় আসা মানে ছত্রভঙ্গ। তথা মারামারি-হানাহানি বেড়ে যাওয়া। আর হাতিতে চড়ে মর্ত্যলোক থেকে স্বামীর গৃহে প্রস্থান করছেন দেবী। তাতে মোটামুটি মঙ্গলজনক। যাবারকালে ধরণী থেকে রোগব্যাধী নিয়ে যাবেন দেবী। যে কারণে পূজারীদের আরাধনা ছিল করোনা ভাইরাস থেকে ধরণীকে রক্ষা।

এমনটি জানিয়ে সিলেটের গোপালটিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের পুরোহিত কাব্যতীর্থ রজত কান্তি চক্রবর্তী বলেন, এবার দুর্গোৎসব হয়নি, হয়েছে দুর্গাপূজা। করোনা ভাইরাসের কারণে বিসর্জনেও নেই কোনো ধরনের শোভাযাত্রা। প্রত্যেকে আলাদাভাবে নিয়ে বিসর্জন দিয়েছেন।

তিনি বলেন, দেবী অনেক রূপে আসেন। বৈষ্ণবী রূপে আসা শান্তির প্রতীক। আসুরিক শক্তিতে আসেন অসুর বদ করতে। ঘোড়ায় চড়ে আসা-যাওয়া মানে ছত্রভঙ্গ তথা হানাহানি-মারামরির ইঙ্গিত বহন করে। এবার মর্ত্যলোক থেকে দোলায় চড়ে আসেন দেবী। আজ বিজয়া দশমীতে বিসর্জনে শিবের সঙ্গে স্বামীর গৃহে ফিরে যাবেন হাতিতে চড়ে। তাই বিসর্জনের পর প্রত্যেক মণ্ডপে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি ও শান্তির জন্য আরাধনা করবেন তারা।

সনাতন ধর্মের লোকজন জানান, এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মণ্ডপগুলোতে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি মণ্ডপ পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের জন্য খোলামেলা রাখা, শুধু পুষ্পাঞ্জলির সময় মাইকের ব্যবহার করা, সাউন্ড সিস্টেম বা ডিজের ব্যবহার না করা এবার এসব বাধ্যতামূলক ছিল। স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এবার প্রসাদ বিতরণ, আরতি, প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করা হয়নি। মণ্ডপের প্রবেশদ্বারে জীবাণুনাশক স্প্রে করা অথবা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা এবং পূজার্থী ও দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল। মণ্ডপ গেটে থার্মার স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ভিড় এড়াতে অল্পসংখ্যক পূজার্থীকে দফায় দফায় পুষ্পাঞ্জলি অথবা ভার্চ্যুয়াল পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা রাখা হয়।

শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মণ্ডপে প্রবেশ ও প্রস্থানের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। আতশবাজি বা পটকা পরিহার করা, সন্ধ্যার পর দলবেধে মণ্ডপে না যাওয়া, করোনার কারণে এমন বাধ্যবাধকতা রাখা হয় এবারের পূজায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার সিলেট বিভাগে পারিবারিক ও সার্বজনীন দুই হাজার ৭৫৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগে গত বছর থেকে এবার মণ্ডপ ৯০টি বেশি ছিল। সবচেয়ে বেশি মৌলভীবাজার জেলায় এক হাজার ৮৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়। এ বছর সিলেট জেলায় ৫৮৪টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়। যা গত বছর থেকে ৩৫টি কম। আর সিলেট মহানগর এলাকায় মোট ৬৪টি পূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সার্বজনীন পূজা ৪৯টি ও পারিবারিক ১৫টি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
এনইউ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।