ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রায়হানের মায়ের অনশন ভাঙালেন মেয়র আরিফ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২০
রায়হানের মায়ের অনশন ভাঙালেন মেয়র আরিফ নিহত রায়হানের মায়ের অনশন ভাঙান সিসিক মেয়র আরিফুল হক

সিলেট: পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হানের মা সালমা বেগমকে শরবত পান করিয়ে আমরণ অনশন ভাঙালেন সিলেট সিটি করপোরেশেনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

রোববার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার আগে অনশন ভেঙে আমরণ অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন নিহত রায়হানের মা ও স্বজনরা।

অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে এদিন সকাল ১১টায় সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অনশনে বসেন নিহত রায়হানের মা।

পরিবারের সদস্যরা রায়হান হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন ছাড়াও মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে রায়হানের মায়ের সঙ্গে অনশনে অংশ নেন।

নিহত রায়হানের মাকে আশ্বাস দিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানানন, রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। এরপরও অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র।

মেয়রের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অনশন থেকে উঠলেও রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আমি আর আশ্বাস শুনতে চাই না। এবার উদ্যোগ দেখতে চাই। এসআই আকবরসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার দেখতে চাই।

রোববার দুপুরে রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে ব্যবসায়ীরা নগরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে মিছিল বের করে অনশনে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান।

গত ১১ অক্টোবর রায়হানের পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত সবাই গ্রেফতার না হওয়ায় অনশনে যান রায়হানের মা।

গত ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদসরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান  রায়হান।

পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবার পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।

নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ান মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।

এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানা হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতে থাকে। মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন।

পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চালায় পিবিআই। নিহতের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়না তদন্ত করা হয়। তাতে রায়হানের দেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন মেলে ফরেনসিক রিপোর্টে। এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর পলাতক থাকলেও পুলিশ হেফাজতে থাকা কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ২০ অক্টোবর ও হারুনুর রশিদকে ২৪ অক্টোবর গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২২ অক্টোবর এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা।

এছাড়া রোববার নিহত রায়হানকে ছিনতাইকারী হিসেবে অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২০
এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।