ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ছিলেন রফিক উল হক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ছিলেন রফিক উল হক

ঢাকা: সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ২০০৭ সালে। ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কারাবন্দি আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেছিলেন তিনি, যে কারণে আদ দ্বীন হাসপাতাল সহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।  

২০০৭ সালের পর ফখরুদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা সহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেই মামলা করে তৎকালীন সরকার। সেসময় রফিকুল হক শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া উভয়ের স্বপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় না থাকার কারণেই দুই দলের নেত্রীর পক্ষে আইনজীবী হতে পেরেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের বাস্তবতায় যে কোনো সিনিয়র আইনজীবীর কোনো না কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকে। যে কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না, রফিকুল হক ছিলেন তাদের একজন।

তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি দুই জনেরই (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) আইনজীবী হয়েছিলেন, কারণ তার রাজনৈতিক কোনো পরিচয় ছিল না। আর সেসময় রাজনৈতিক পরিচয় থাকা অনেক আইনজীবীই বিভিন্ন কারণে ওই দুইজনকে আইনি সহায়তা দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের রাজনীতির সাথেও তিনি কখনো জড়িত হননি, ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে থেকেছেন। ফলে যে কোনো রাজনৈতিক দলের লোকই আইনি সমস্যা নিয়ে তার দ্বারস্থ হতে পারতেন। তিনি যেহেতু কোনো দল করেননি, তাই সব রাজনৈতিক দলের লোকই তার কাছে যেত এবং তার ওপর ভরসা করতে পারতো।

রফিকুল হক ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া যে কোনো মামলায় আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেওে সবসময় তিনি নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করতেন । তার বয়স ৮০ বছরের বেশি হওয়ার পরও  তিনি ব্যাপক পড়ালেখা করে প্রস্তুতি নিয়ে আদালতে যেতেন।

রফিক-উল হক তার ব্যক্তিগত আয় থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে চিকিৎসার উন্নয়নের জন্য দান করেছেন। একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসেবে তার আয় ছিল অনেক। আর সেই হারেই তিনি দানও করতেন। তিনি তার জীবনে কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ দান করে গেছেন। আর এই বিষয়ে তিনি খুব একটা কথাও বলতেন না। আদ দ্বীন হাসপাতালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল তৈরির পেছনে তার বড় ভূমিকা রয়েছে।

বারডেম হাসপাতালের একটি বিশেষ বিভাগ তৈরিতে বড় অঙ্কের অনুদান দেয়ার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে ঢাকার বাইরে কয়েকটি সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকার আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের জন্যও তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেছেন।

শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেশের এই প্রবীণ আইনজীবী। তার বয়স হয়েছির ৮৫ বছর। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আদ দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কয়েকদিন আগে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
এমএইচ/এমএমএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ