ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

লালমনিরহাটে কিশোর অপরাধে ৩ মাসে ৪ মামলা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
লালমনিরহাটে কিশোর অপরাধে ৩ মাসে ৪ মামলা সীমান্ত এলাকা, ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: নানান কারণে দিন দিন কিশোর অপরাধ বাড়ছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে চারটি মামলায় পাঁচ কিশোরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটে শিশু-কিশোর অপরাধ নানান কারণে বেড়ে চলেছে। কিছু কিছু অপরাধী চক্র শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছে। ফলে নিজের অজান্তে অনেক শিশু-কিশোর জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। চুরি, ছিনতাই, চোরাকারবারি, তথ্য প্রযুক্তি বা ধর্ষণের মত মামলায়ও জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। পরিবারিক অশান্তি, শিক্ষার অভাব বা দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন কারণে কিশোররা অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়াচ্ছে। কিশোর অপরাধের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে মিটে গেলেও আদালত পর্যন্তও পৌঁছে যাচ্ছে কিছু ঘটনা।  

চোরকারবারিতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে নিরাপদ ভেবে অপরাধীরা কৌশলে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছেন। লালমনিরহাটের প্রায় ২২ কিলোমিটার সীমান্ত কাঁটাতারের বেড়াহীন হওয়ায় মাদক ছাড়াও বিভিন্ন পণ্য চোরাকারবারির সুযোগ অন্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি। মাদক ও অন্যান্য ভারতীয় পণ্য পাচারে অপরাধীরা শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার করছেন। অল্প কিছু টাকা দিলেই কিশোরদের দিয়ে পণ্য পাচার করা যায়। ফলে অপরাধীরা অনেক ক্ষেত্রে তাদেরই বেছে নিচ্ছেন। এ কারণে ধিরে ধিরে এসব কিশোর বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

শুধু চোরাকারবারিতে নয়। তিস্তা আর ধরলা নদী বেষ্টিত অনগ্রসর এ জেলায় দারিদ্র্যের কারণেও চুরি-ছিনতাইয়ের মত অপরাধে কিশোররা সম্পৃক্ত হচ্ছে। করোনাকালে দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোরদের বাইরে আনাগোনাও বেড়েছে উদ্বোগজনক হারে। আর এসব কিশোরের একটা বড় অংশ মাদক সেবনসহ নানান ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। তবে সামাজিকভাবে জনসচেতনতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে জেলায় কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা।  

লালমনিরহাটের সিনিয়র সাংবাদিক এস দিলীপ রায় বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালে দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোরদের একটা বড় অংশ অলস সময়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে। মাদক সংগ্রহে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এছাড়া কিছু উদ্বাস্তু পরিবারের কিশোর এবং কর্মহীন কিশোররা দারিদ্র্যের কারণে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার অভাবে অনেক পরিবার শিশু-কিশোরদের সামাজিকীকরণে উদাসিন। ফলে জেলায় কিশোর অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কিশোর অপরাধ দমনে সচেতনতার বিকল্প নেই। কিন্তু কিশোর অপরাধের মত বড় একটি ইস্যু নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমন ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে সমাজে বড় বড় অপরাধ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।  

তাই সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

লালমনিরহাট আদালত পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে কিশোর অপরাধে চারটি মামলায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে হাতীবান্ধা থানায় দু’টি ধর্ষণ, সদরে তথ্য প্রযুক্ত আইনে একটি এবং আদিতমারী থানায় একটি চুরির মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠন করা হয়েছে। আর একজন যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ও একজন পলাতক রয়েছে।  

লালমনিরহাট জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কোনো মামলায় শিশু-কিশোর অভিযুক্ত হলে তদন্ত করে তাদের ব্যাপারে আলাদা অভিযোগ গঠন করে দেওয়াই আমাদের কাজ। কিশোর সংশোধনাগার ও সমাজ সেবা কিশোর অপরাধীদের সংশোধনে কাজ করছেন। আমরা নরমাল ক্যাম্পেইন করে থাকি। জানা মতে এ জেলায় একটিও কিশোর অপরাধের মামলা নেই।  

শিশু-কিশোররা যাতে অপরাধে না জড়ায় এমন কাউন্সেলিং করা হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সভা, সমাবেশে সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষকে অপরাধে না জড়ানোর আহ্বান জানানো হলেও আলাদা করে শিশু-কিশোরদের কোনো কাউন্সেলিং করা হয় না। আসলে শিশু-কিশোররা যাতে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে, সেজন্য পরিবার ও সমাজের প্রতিটি মানুষকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।