ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শাপলায় জীবিকা নির্বাহ বিলাঞ্চলের মানুষের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
শাপলায় জীবিকা নির্বাহ বিলাঞ্চলের মানুষের

গোপালগঞ্জ: নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত জেলা গোপালগঞ্জ। এ জেলায় ১২৪টি ছোট বড় বিল রয়েছে।

এসব বিল বছরের অধিকাংশ সময় জলবেষ্টিত থাকে। এসব বিলে বিলে শোভা পায় সবুজ, সাদা ও লাল রংয়ের শাপলা। শাপলা শুধু জাতীয় ফুল নয়। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে শাপলা সবজি হিসেবেও অধিক জনপ্রিয়।  

জেলার বিভিন্ন বিল থেকে শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে সহস্রাধিক পরিবার। এ জেলার শাপলা বিক্রি হয় আশপাশের জেলাতেও। এছাড়া জেলায় অন্তত ২৫টি লাল শাপলার বিল রয়েছে। এসব বিলেও লাল শাপলায় ভরপুর। কিন্তু এ অঞ্চলে এখনও লাল শাপলা সবজি হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়নি। তবে এসব বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে শতাবিক পরিবারের জীবন চলে।  

জেলার কাশিয়ানী-মুকসুদপুরের সিংগার বিল, চান্দারবিল, মোল্লার বিল এবং কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার জোয়ারিয়ার বিল, বর্ণি বিল, কান্দি বিলসহ শতাধিক বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় সবুজ, সাদা ও লাল শাপলা। বর্ষায় এসব বিল পানিতে তলিয়ে থাকে। জম্মে থাকে প্রচুর শাপলা। বর্ষা মৌসুমে কৃষকের তেমন কাজও থাকে না। তাই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এ শাপলা তোলার পেশায় জড়িত। এ পেশায় কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বিল থেকে শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন।

বিল থেকে ডিঙ্গি নৌকায় শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিতরা বলেন, ভোরে নৌকা নিয়ে বিলে ঘুরে ঘুরে শাপলা তোলেন তারা। একজন প্রতিদিন ১০০ থেকে ৪০০ মোটা (১০ পিস শাপলায় এক মোঠা আর ১০ মোঠায় এক আটি বা ১০০ পিস) শাপলা তোলেন। দুপুরে স্থানীয় পাইকাররা আসে। তাদের কাছে বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাই।

পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহ করে জেলা সদরসহ আশপাশের জেলার হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। আর এই শাপলাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর, সাতপাড় ও কাশিয়ানি উপজেলার সিংগা, হাতিয়ারা, কোটালীপাড়ার রামনগর, কালীগঞ্জ, ভাঙ্গারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে শাপলা বিক্রির বাজার গড়ে উঠেছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী বাশুড়িয়া গ্রামের হাফিজুর শেখ, একই গ্রামের সাইফুল শেখ ও সিঙ্গারকুল গ্রামের আলামীন শেখ বলেন, তারা প্রতিদিন বর্ণি বিল থেকে শাপলা তুলে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন। তাদের মতো আরো অনেকে এ বিল থেকে শাপলা তুলেন এবং বিক্রি করেন। প্রতিদিন শাপলা বিক্রি করে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় করেন তারা। এ দিয়ে তাদের সংসার ভাল ভাবে চলে যাচ্ছে। বিলের পানি না শুকানো পর্যন্ত এসব বিল থেকে শাপলা পাওয়া যাবে বলেও তারা জানান।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা গ্রামের শাপলা সংগ্রহকারী নিহার মণ্ডল, শ্যামল মণ্ডল, সচিন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, বর্ষার সময় আমাদের বিল সাদা ও নীল শাপলা ভরে ওঠে। এই সময় আমাদের এলাকায় কোনো ফসল হয়না। তাই আমরা প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সিংগার বিলে শাপলা সংগ্রহ করি। তাতে আমার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয়।  

একই গ্রামের নসিমন চালক মনিশংকর মন্ডল ও বিকাশ বিশ্বাস বলেন, সিংগা ব্রিজ থেকে প্রতিদিন ২-৩ নসিমন শাপলা আমরা বাগেরহাটের মোল্লাহাট ও নড়াইল জেলার নড়াগাতী বাজারে নিয়ে যাই। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে শাপলা কিনে নিয়ে আবার ওখানে বিক্রি করে। প্রতিদিন আমাদের হাজার টাকা রোজগার হয়। এভাবে প্রায় চার মাস চলবে এই শাপলা টিপ।  

শাপলার পাইকার ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম, আনিস মোল্লা, মনোজ মল্লিক বলেন, শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। যে কোনো মাছের সঙ্গে শাপলা তৈরী হিসেবে ব্যবহার হয়। এখানকার শাপলা খেতেও খুব সুস্বাদু। তাই এখানকার শাপলার দরও বেশি।  

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দু কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, শাপলা এই অঞ্চলের খুবই জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক সবজি। সুদূর অতীত থেকে এই শাপলা এই এলাকার মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে আসছে। পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ। শাপলায় রয়েছে আয়োডিন ও আয়রন। যা মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। এছাড়া শাপলা বিক্রি করে দৈনন্দিন আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক দরিদ্র পরিবার। গোপালগঞ্জের বিলে উৎপাদিত শাপলা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও বিক্রির জন্য যায়। অনেকে শাপলার ব্যবসা করে ভালো আছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad