ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাগেরহাটে গ্যাং কালচার না থাকলেও বাড়ছে কিশোর অপরাধ

এসএস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
বাগেরহাটে গ্যাং কালচার না থাকলেও বাড়ছে কিশোর অপরাধ

বাগেরহাট: বাগেরহাটে গ্যাং কালচার না থাকলেও বাড়ছে কিশোর অপরাধ। স্কুল পড়ুয়া ও সমবয়সীরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।

ইভটিজিং, মাদক সেবন, মারাপিট, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণের মতো অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে শিশু-কিশোরদের দ্বারা।  

শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।  

কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা রুখতে সামাজিক ও পুলিশি তৎপরতা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) পঙ্কজ চন্দ্র রায়।
এদিকে সব তৎপরতাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিশোররা অপরাধ করেই যাচ্ছে। যা সামাজিক অবক্ষয়ের প্রমাণ বহন করে।

বাগেরহাট জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ ১১০ শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে। একই সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ ১৪৭ শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ২০২০ সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৪৭ শিশু-কিশোর মামলার আওতায় এসেছে। এর মধ্যে তিন কিশোরের বিরুদ্ধে হত্যা, ১৩ কিশোরের বিরুদ্ধে মাদক এবং বিভিন্ন ফৌজদারি (পেনাল কোড) আইনে ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০২০ সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৪৪ শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

এসব মামলার বাইরেও শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। সাম্প্রতিক সময়ে বাগেরহাট শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় শিশু-কিশোরদের দ্বারা প্রতিবেশীর ঘরে চুরি, ভাড়াটিয়া বাড়িতে চুরি, টাকার জন্য বন্ধুকে মারধর, নিজ ঘর থেকে টাকা চুরি, টাকার জন্য অভিভাবককে মারধরের মতো ঘটনা ঘটেছে। আর প্রকাশ্যে ধুমপান তো এখন কিশোরদের ফ্যাশন হয়ে গেছে। এছাড়া মাদক সেবন ও মাদক সেবন করে বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে মারধর, মোবাইলে গেম খেলে উত্তেজিত হয়ে অভিভাবককে মারধরের বিষয়ও শোনা যাচ্ছে। এসব বিষয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থানায় বা আদালতে মামলা না করে অভিভাবক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। তবে শিশু-কিশোর দ্বারা সংগঠিত অপরাধ ও কিশোরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

বাগেরহাট সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক ফোরামের আহ্বায়ক আহাদ উদ্দিন হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাটে গ্যাং কালচারের উপস্থিতি না থাকলেও স্কুল পড়ুয়া ও সমবয়সী শিশু কিশোরদের সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধের কথা শোনা যায়। ছোট ছোট মারামারি, ইভটিজিং, মাদক সেবন, চুরিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে শিশুরা জড়িত রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উৎকন্ঠা রয়েছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমাতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের চলাচল, আচার-আচারণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি বিষয়ে সমন্বয় থাকতে হবে।  

পাশাপাশি কিশোর অপরাধ কমাতে প্রশাসনের নজরদারির বাড়ানোরও দাবি জানান তিনি।

শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্ম নেয় না। বিভিন্ন পরিস্থিতে শিশু-কিশোররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আমরা অপরাধী শিশু-কিশোরদের আসামি বলি না। তাদের সুষ্ঠু জীবনে ফেরার জন্য পরামর্শ দেই। বাবা-মাসহ পরিবারের অভিভাবকদের শিশুদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচারণ করতে হবে। কোনো শিশু-কিশোর যদি ছোট অপরাধ করে ফেলে, তবে তাকে বোঝাতে হবে।  

শিশু-কিশোররা যদি পরিবারের বড় সদস্যদের কাছ থেকে বন্ধুসুলভ ব্যবহার পায়, তাহলে কিশোর অপরাধ কমবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিশুদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে করণীয় বিষয়ে বাগেরহাটের প্রবেশন কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের ফলে শিশু-কিশোররা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বাবা-মায়ের দাম্পত্যকলহ, বাবা-মায়ের অবহেলা, হতাশা এবং সামাজিক-পারিবারিক বন্ধনের অভাবও শিশুদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার জন্ম দেয়। অনেক সময় পারিবারিক দারিদ্রতাকে পূঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহল শিশুদের আইন বিরোধী কাজে ব্যবহার করে। শিশুদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিস্তারের সঙ্গে এবং অপ-সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। শিশুদের সুস্থ বিকাশের জন্য খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

বাগেরহাটের এসপি পঙ্কজ চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাটে কিশোর গ্যাংয়ের কোনো উপস্থিতি নেই। বাগেরহাটে কিশোরদের দ্বারা বড় কোনো অপরাধও সংগঠিত হয়নি। দু-একটি চুরি, মাদক সেবনসহ কিছু অপরাধের অভিযোগ রয়েছে শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে। জেলার শিশু-কিশোরদের অপরাধ মুক্ত রাখতে সামাজিক ও পুলিশি তৎপরতা চলমান রয়েছে। কমিউনিটি ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা শিশু-কিশোরদের আইন বিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।