ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গ্রেফতার এড়াতেই ইলিশ রক্ষা অভিযানে হামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
গ্রেফতার এড়াতেই ইলিশ রক্ষা অভিযানে হামলা ইলিশ/ ফাইল ফটো

বরিশাল: ডিম ছাড়ার প্রধান মৌসুমে টানা ২২ দিন দেশের নদ-নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ রয়েছে। সরকারি এ নির্দেশনা অনুযায়ী, ওই ২২ দিন ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ।

এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি দিনে ও রাতে চলছে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, থানা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর অভিযান। তবে এসব অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটছে বরিশালে। ওই হামলায় অভিযানিক দলের সদস্যরা আহতও হয়েছেন। তারপরও এগুলোকে বড় ধরনের কোনো ঘটনা হিসেবে আখ্যা না দিয়ে দেশের স্বার্থে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সময় অভিযান অব্যাহত রাখাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে মৎস্য বিভাগ।

বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাশ বলেন, ‘বিগত সময় থেকে এ পর্যন্ত হিসেব কষলে বরিশাল সদরের চন্দ্রমোহন, বাবুগঞ্জ-মুলাদীর মীরগঞ্জ, হিজলার আবুপুর, ধূলখোলা, গৌরবদী ও মেহেন্দিগঞ্জে চরশিফুলী এলাকায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। এসব জায়গায় যে সবসময় অভিযানিক দলের ওপর হামলা হয়, এমন নয়। মূলত নদীতে অভিযানের সময় অসাধু জেলেদের ধাওয়া করলে এসব এলাকায় কিছু লোক সংঘবদ্ধ হয়ে যায়। আর এর কারণ খতিয়ে প্রাথমিকভাবে যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে তারা আত্মপক্ষ রক্ষা কিংবা গ্রেফতার এড়াতে এগুলো করে থাকে। তাদের মতে, জড়ো হয়ে হইচই করলে অভিযানিক দল তীরে উঠবে না এবং কাউকে আটকও করতে পারবে না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলেরা অনেক সচেতন হয়েছে, তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে আসছে। ’

এদিকে স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে মাছ শিকারে এলাকাভিত্তিক চক্র রয়েছে। সেসব চক্রের মূলহোতারা ক্ষমতাসীন নয়তো বিত্তশালী। তারা অর্থের ব্যবহার করে মৌসুমী জেলেদের দিয়ে নদীতে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার করায়। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন নিয়মের কারণে সুফল পাওয়ায় জেলেরা এ সময় নদীতে নামছেন না। তারা জাল নয়তো নৌকা মেরামত করে এসময় কাটান। আর যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তারা দিনমজুরের কাজ করেন।

এদিকে মৎস্য বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, সরকারের কঠোর অবস্থান ও বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতায় অসাধু ও মৌসুমী জেলেদের ব্যবহারকারী চক্র এখন অনেকটাই কোণঠাসা। সেই সঙ্গে তাদের প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বিরূপ মনোভাব দেখা দিচ্ছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) রাতে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন অভিযানিক দলের ওপর চন্দ্রমোহনে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। ’

তবে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত থাকার কোনো বিষয় সামনে আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হামলার ঘটনার তদন্তে যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তার বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে হিজলার মেঘনা নদীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে এবং তদন্তও তারা করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হিজলা নৌ-পুলিশের পরিদর্শক শেখ বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘ওই মামলায় নামধারী ১০ জন এবং অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে জ্ঞাতদের মধ্যে কোনো জনপ্রতিনিধিকে আসামি করা হয়নি, আর তদন্তে যার বিরুদ্ধেই হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। ’

অভিযানের সময় নদীতে শিশু-কিশোরদের পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বরিশাল সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মূলত শিশু-কিশোর বয়সী ছেলেরা জেলে নয়, এদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। না বুঝে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাদের অভিভাবদের ডেকে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি মুচলেকা রাখা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করে। ’

এদিকে বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে জেলেশূন্য নদী দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য দপ্তরের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘এ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো। সরকারি নিয়ম মেনে নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকলে দেশের নদ-নদীতে ইলিশের সংকট থাকবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
এমএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।