ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যে কারণে ভাই-ভাবি আর ভাতিজা-ভাতিজিকে হত্যা করেন রাহানুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
যে কারণে ভাই-ভাবি আর ভাতিজা-ভাতিজিকে হত্যা করেন রাহানুর রাহানুর

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় শাহিনুর এবং তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে সিআইডি পুলিশ।  

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রাহানুর তার ভাই-ভাবি আর ভাতিজা-ভাতিজিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক এ তথ্য জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রাহানুর একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

রাহানুরের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাহানুর বর্তমানে বেকার। বিগত বেশ কিছুদিন তার কোনো আয় ছিল না। একই সঙ্গে গত নয়-১০ মাস আগে তার বউও চলে যান। এজন্য তিনি বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তার ভাবি সাবিনা খাতুন তাকে প্রায়ই গালমন্দ করতেন। ঠিক মতো খেতে দিতেন না। এতে তার মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্ম নেয়। একপর্যায়ে তিনি ভাবি সাবিনা খাতুনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য ১৪ অক্টোবর রাতে পাশের ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন ও স্থানীয় মুদি দোকান থেকে স্পিড (পানীয়) কিনে তাতে মিশিয়ে তার ভাবি ও ভাতিজা-ভাতিজিকে পান করতে দেন তিনি। রাতে রাহানুর তার বড় ভাইয়ের ঘরে টিভিতে আইপিএল খেলা দেখছিলেন। রাত দেড়টার দিকে বড় ভাই ঘের থেকে বাড়ি এসে দেখেন, রাহানুর তার ঘরে বসে টিভি দেখছেন। এসময় শাহিনুর তাকে টিভি দেখার জন্য বকাঝকা করে বলেন, তুই বিদ্যুৎ বিল দিস না, টিভি দেখছিস কেন। এসময় রাহানুর ভাইকে বলেন, এ মাসের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেব, তুমি এ স্পিডটি খাও। বড় ভাই তখন তার দেওয়া স্পিডটি পান করেন। এরপর রাতের কোনো এক সময় রাহানুর ঘরের কার্নিশ বেয়ে ছাদে উঠে চিলেকোঠার দরজা দিয়ে বড় ভাইয়ের শোবার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত ভাইকে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে পাশের ঘরে থাকা ভাবিকেও একইভাবে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের সময় ভাবি চিৎকার দিলে ভাতিজা ও ভাতিজিও ঘুম থেকে উঠে যায়। এজন্য তাদেরও হত্যা করেন রাহানুর। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি বাড়ির পাশের বড় পুকুরে ফেলে দেন তিনি।

অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক আরও বলেন, রাহানুরের দেওয়া তথ্য মতে তাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালেটি উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডি সাতক্ষীরা অফিসের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
 
গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ভোর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে মাহি ও মেয়ে তাসনিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে, ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের চার মাস বয়সী শিশু কন্যা মারিয়া।

ওই রাতেই শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা (নং ১৪) দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। পরে এ ঘটনায় নিহত শাহিনুরের ভাই রাহানুরকে গ্রেফতার করে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সিআইডি। আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবার এ মামলায় নিহত শাহিনুরের ঘের কর্মচারী ও দুই প্রতিবেশীসহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
এসআই
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।