ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কৃষক-শ্রমিকের টাকায় কলাপাড়ায় ভাসমান সেতু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
কৃষক-শ্রমিকের টাকায় কলাপাড়ায় ভাসমান সেতু

পটুয়াখালী: দেশের উন্নয়নে শুধু রাষ্ট্র নয়; নাগরিকদের দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তার প্রমাণ করে দিয়েছেন কলাপাড়ার সুবিধা বঞ্চিত কৃষক-শ্রমিকসহ সকল পেশার মানুষ। নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে ভাসমান সেতু।

‘সমাজের অতি জরুরি উন্নয়ন কাজ শুধু রাষ্ট্রের মাধ্যমেই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই, কিছু কাজ রাষ্ট্রের নাগরিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে করলে দেশের উন্নতি হয়। ’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আর হাতুড়ির আঘাতে লোহা দিয়ে সেতুর কাঠ আটকাচ্ছেন জাকির হোসেন গাজী।

কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রাম সংলগ্ন পাখিমারা খালের ওপর গ্রামবাসীর অর্থায়নে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

গত ০৫ আগস্ট নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা খালের ১১৬ মিটার আয়রন ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। করোনা পরিস্থিতিতে মজিদপুর, এলেমপুর এবং কুমিরমারাসহ আশপাশের গ্রমের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজার জাত করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙে পড়ে।

সরকারি উদ্যোগে ব্রিজ নির্মাণ সময়ের ব্যাপার। সেজন্য স্থানীয় কৃষকদের পরিকল্পায় প্লাস্টিকের ড্রাম এবং কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছে ১১৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ০৪ ফুট প্রস্থের ভাসমান ব্রিজটি।

কৃষক-জনতার উদ্যোগে ভাসমান ব্রিজ নির্মাণের খবরে উপকূলীয় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ আসছে সেতুটি দেখার জন্য।

সরেজমিন নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার এবং কুমিরমারা গ্রামের সেতু নির্মান স্থানে গিয়ে দেখা যায়, রাতের আঁধার কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একে একে সেতু নির্মাণের জন্য কুমিরমারা, মজিদপুরের কৃষকরা একে একে এসে জড়ো হয়েছেন। যার যার দায়িত্ব নিয়ে সেতু নির্মাণ কাজে মগ্ন হয়ে পড়ে।

কৃষক আলমগীর হোসেন জোমাদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুই মাস আগে এই হানের ব্রিজ ভাইঙ্গা খালে পইর‌্যা যায়। হেইয়্যার পর হইতেই আমাগো দুর্ভোগ শুরু হয়। নীলগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের সহাস্রাধিক পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা, শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন এইখান থেকে হাজার হাজার মণ কৃষি পন্য বিভিন্ন
হাট-বাজার এবং মোকামে পাঠানো হয়। ’

সেতুটি নির্মাণের জন্য ৭২টি প্লাস্টিকের বড় ড্রাম, ২৫০ কেপি চাম্পল কাঠ, ০৩ মণ লোহা (পেরেগ) ০৩ মণ প্লাস্টিক রশি। সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছে ১২ জন কৃষক।

সেতুটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, সেতুর ওপর দিয়ে পণ্যবাহী ভ্যান এবং যাত্রীবাহী ভ্যান চলাচল করতে পারবে। সেতুটির দুই পাশে মোটা রশি দিয়ে খালের দুই মাথায় শক্ত করে বাঁধা রয়েছে এবং ড্রামগুলি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে।

১১৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ০৪ ফুট প্রস্থ্যের সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা। এসব টাকা কুমিরমারা, মজিদপুর গ্রামের ২০০ পরিবার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবার প্রতি ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি টাকা বিভিন্নজনের কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা খালের ওপর নির্মিত হয় ব্রিজটি গত ০৫ আগস্ট রাতে ভেঙে পড়ায় এলাকার মানুষ চরম দুর্যোগে ছিলো।

এ বিষয়ে এলজিইডি প্রকৌশলী মোহর আলী বাংলানিউজকে বলেন, জন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার পর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এলজিইডি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। ব্রিজটি পুনঃনির্মান কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় জনসাধারনে চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য যথাযথ বরাদ্দ পেলে ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।