ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাটির নিচে তার: দ্রুত কাজ শেষ করার আশা

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
মাটির নিচে তার: দ্রুত কাজ শেষ করার আশা ..

ঢাকা: কয়েক দফা শর্তে রাজধানীর ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নিতে সড়ক খনন করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে অনুমতি পেয়েছে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও ক্যাবল অপারেটরস অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুই প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে বুধবার (২১ অক্টোবর) থেকে ১৫ দিন সময় দিয়ে ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নিতে ধানমন্ডি এলাকার সীমান্ত স্কয়ার থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর (বাংলাদেশ আই হসপিটাল) পর্যন্ত প্রধান সড়কের উভয় পাশে হরিজেন্টাল ডিরেকশন ড্রিলিং (এইচডিডি) পদ্ধতিতে সড়ক খননের অনুমতি দিয়েছে ডিএসসিসি।

ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-১) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মেয়রের অনুমোদন অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে এইচডিডি পদ্ধতিতে খননের জন্য আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত খননের অনুমতি দেওয়া হলো।

আইএসিপিএবি ও কোয়াব নেতারা বলছেন, তারা দু’একদিনের মধ্যেই খনন কাজ শুরু করবেন। ইতোমধ্যে তাদের কারিগরি টিম ওইসব এলাকায় কাজ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে আইএসপিএবি মহাসচিব ইমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতিপত্র পাওয়া গেছে। আমরা আগামী বুধবার থেকেই কাজ শুরু করবো।

খনন কাজ শুরুর জন্য এনটিটিএন, বিটিসিএল, ওয়াসা ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির ভূগর্ভস্থ ক্যাবল বা ইনফ্রাকট্রাকচারের জন্য তাদের ম্যাপ প্রয়োজন পড়বে।

ইমদাদুল হক বলেন, আইন অনুযায়ী লাস্ট মাইল কানেকটিভিটি আমাদেরই করতে হবে। এনটিটিএনদের মধ্যে ফাইবার অ্যাট হোম মহাখালী এলাকায় লাস্ট মাইল কানেকটিভিটি দিলেও গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে। আর আমরা লাস্ট মাইল কানেকটিভিটি দিলে খরচ কমবে।

গত আগস্ট থেকে ঢাকায় তার কাটা শুরুর পর উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা হলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় তা অব্যাহত থাকে। এর প্রতিবাদে গত ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল দুই সংগঠন। গত ১৭ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় তারা। পরদিন দক্ষিণের মেয়র তাপসের সঙ্গে আলোচনায় নভেম্বরের মধ্যে মাটির নিচ দিয়ে তার সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের মধ্যে তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ না হলেও অনেকটাই দৃশ্যমান কিছু দেখা যাবে।

কোভিড পরিস্থিতিতে মাটির নিচে তার নিতে বাড়তি বিনিয়োগ হলেও এতে গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ গুণতে হবে না বলে দাবি করছেন কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, গাইড লাইন অনুযায়ী মাটির নিচ দিয়ে তার বসানোর দায়িত্ব এনটিটিএনদের। কিন্তু ঢাকা শহরে অতি নগণ্য পরিমাণ জায়গায় তারা পৌঁছাতে পেরেছে।

তিনি বলেন, এনটিটিএনদের আমরা যখন লাইসেন্স দেই, তাতে বলা হয়নি ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে তার বসিয়ে দিতে হবে। তারা যেখানেই তাদের ব্যবসার সুবিধা দেখে সেখানেই তার বসায়। সব জায়গায় এনটিটিএনের সংযোগ না থাকায় আইএসপিরা লাস্ট মাইল কানেকটিভিটি দেয়। তাই হুট করে ঝুলন্ত তার সরিয়ে ফেললে গ্রাহক সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। এজন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করে সমস্যা সমাধানে সিটি মেয়রকে অনুরোধ করেন মন্ত্রী।

খনন কাজে সিটি করপোরেশনের শর্ত
খনন কাজ শুরুর আগেই বাস্তবায়নকারী সংস্থার নাম, খনন কাজের সংক্ষিপ্ত উদ্দেশ্য, জনগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও কাজ শেষের তারিখ উল্লেখসহ সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে।

খনন কাজ শুরুর তিন দিন আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনারকে অবহিত করতে হবে এবং খনন কর্মসূচি দিতে হবে। সড়ক বন্ধ করার আগে উপ-পুলিশ কমিশনারের (ট্রাফিক) অনুমতিক্রমে সড়ক বন্ধ করতে হবে।

খনন সাইটের চারিদিকে নির্ধারিত ডিজাইন ফিতা দ্বারা বেষ্টনি/সিগন্যাল লাইট স্থাপন করতে হবে। রাতের বেলা খননের সময় পর্যাপ্ত বাতি ও সিগন্যাল লাইটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রাতে লাল বাতি ও দিনে হলুদ বাতির ব্যবস্থা করতে হবে। পথচারী ও যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচলের জনা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

খনন কাজ চলাকালীন এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের পূর্ব সময় পর্যন্ত সাইটে ধুলাবালি উড়ে যাতে গরিবেশ দূষণ না হয় এবং জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধার সৃষ্টি না করে সেজন্য নিয়মিত সকাল-বিকেল দুই বেলা প্রয়োজন মোতাবেক সড়কে পানি ছিটাতে হবে।

সড়ক কাটিংয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পুরুত্বের এমএস সিট ব্যবহার করে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। খনন সাইটে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি করা যাবে না। খনন ও পুনর্বাসন সাইটে সংস্থার মাঠ পর্যায়ে প্রকৌশলী ও অন্যান্য কারিগরি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে উপস্থিত রাখতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশ্যই খনন কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় পুনরায় অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। খনকৃত মাটি, রাবিশ ইত্যাদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে।

খনন কাজ সম্পন্নের পরই খননকৃত ট্রেন্স বালি দিয়ে ভরাট ও কমপ্যাকশন করতে হবে। খনন শেষে ভরাটকৃত ট্রেন্স যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দিতে হবে। খনন কাজ শেষে সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাখতে হবে।

বাস্তবায়নকারী সংস্থা খননকালে খননকৃত স্থানে যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকতে হবে। অন্যান্য সংস্থায় ভূগর্ভস্থ সার্ভিস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে খননকারী সংস্থা এর দায়-দায়িত্ব বহন করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লাইন জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করে সক্রিয়করণে বাধ্য থাকবে।

খননকালে সাইটে সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে হবে এবং সড়ক খনন সংক্রান্ত অনুমোদনের কপি অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ডিএসসিসির প্রতিনিধি/উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের চাহিদা মাত্র তা প্রদর্শন করতে হবে এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক নির্দেশ মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণে বাধ্য থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
এমআইএইচ/ডিএন/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।