ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মিরসরাইয়ে খাল দখল করে মৎস্য প্রকল্প, হুমকিতে বাঁধ ও সড়ক

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
মিরসরাইয়ে খাল দখল করে মৎস্য প্রকল্প, হুমকিতে বাঁধ ও সড়ক মিরসরাইয়ে সরকারি খাল দখল করে গড়ে তোলা মৎস্য প্রকল্প। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সরকারি খাল দখল করে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলছে প্রভাবশালী একটি মহল। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে তিনটি ইউনিয়নে স্থানীয় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে মুহুরী প্রজেক্টের বাঁধ নোয়াখালী-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়ক।

এই বিষয়ে চলতি বছরের জুন মাসে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত একটি চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় বাঁশখালী মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সংগঠন। এরপর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়ে খাল দখল বন্ধ করে দেয়।  

কিন্তু গত ১৫-২০ দিন ধরে স্থানীয় বাঁশখালী এলাকার মজিবুল হকের ছেলে মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ফের বালু উত্তোলনের মেশিন বসিয়ে খালে বাঁধ দিয়ে মৎস্য দীঘি খনন করছে।

বাঁশখালী মৎস্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এটিএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরকারি খাল দখল করে মৎস্য দীঘি খননের বিষয়ে চলতি বছরের জুন মাসে আমরা স্থানীয় ফরহাদ নামে একজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে খাল দখল বন্ধ করে দেন এবং খাল দখল না করতে দখলদারদের নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু গত ১৫-২০ দিন ধরে মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রভাবশালী একটি মহল আবারও খালে বালু উত্তোলনের মেশিন বসিয়ে বাঁধ দিয়ে খাল দখল করে মৎস্য দীঘি তৈরি করছে।  

তিনি আরো জানান, উপজেলার ৩নং জোরারগঞ্জ, ৫ নং ওচমানপুর ও ৬নং ইছাখালী ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বর্ষা মৌসুমে এই খাল দিয়ে পানি নিষ্কাসন হয়। খালে বাঁধ দিয়ে পানির গতিপথ বন্ধ করে দিলে এসব ইউনিয়নে ফসলাদি নষ্টসহ হাজার হাজার বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে যাবে। এমতাবস্থায় মুহুরী বাঁধ ঘেঁসে যাওয়া খালে দীঘি খনন বন্ধের জোরার দাবি জানান তিনি।

মিরসরাইয়ে সরকারি খালে বালু উত্তোলনের জন্য বসানো মেশিন

বাঁশখালী মৎস্য চাষী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, এই বিষয়টি আমাদের সাবেক মন্ত্রী, মিরসরাইয়ের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে অবহিত করেছিলাম। কিন্তু তিনি গত কিছুদিন অসুস্থ থাকায় এখন যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে এরা খাল দখল করে মৎস্য দীঘি তৈরি করছে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বাঁশখালী বাজারের একটু পশ্চিমে নোয়াখালী, সোনাগাজী, জোরারগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে বয়ে যাওয়া সরকারি খালে দুটি মেশিন বসানো রয়েছে। তার পাশে কিছুদিন পূর্বে খালে বাঁধা দিয়ে একটি মৎস্য দীঘি খনন করা হয়েছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে দুটি মেশিনে সারারাত বালু উত্তোলন করে খালে বাঁধ দিতে থাকে। দিনের বেলায় বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে এবং আশেপাশে কেউ থাকে না। এরা খালে মৎস্য দীঘি খনন করে দখল শর্তে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়।

অভিযুক্ত মহিউদ্দিন বলেন, আমি সরকারি খাল দখল করে মৎস্য দীঘি খননের বিষয়টি সত্য নয়। পাশে আমার একটি প্রকল্পের মেরামতের জন্য ভাড়ায় নিয়ে একটি বালু উত্তোলনের মেশিন বসিয়েছি।

এই বিষয়ে ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, গত জুন মাসে আমি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ওই সরকারি খালে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছি। কিন্তু এখন আবার বালু উত্তোলন করে দীঘি খননের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ খবর নেব এবং এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করব।

এ ব্যাপারে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, সরকারি খাল দখল করে বালু উত্তোলন ও মৎস্য দীঘি খননের বিষয়টি আমি অবগত নই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
এসএইচডি/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।