ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এ বছর বীজ আলুরও সংকট রয়েছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
এ বছর বীজ আলুরও সংকট রয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোস্তাক হোসেন

ঢাকা: এ বছর বীজ আলুরও সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তাক হোসেন।

বীজের দাম খুব অস্বাভাবিক জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে বীজের দাম স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে মনিটরিং করার অনুরোধ জানান তিনি।

বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়, অতিরিক্ত। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া উচিত বলে মনে করেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।

রোববার (১৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলুর দাম কীভাবে ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে আনা যায় সে বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান তিনি।

পর্যাপ্ত আলু মজুদ আছে কিনা ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দাম কেন কার্যকর করা হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাক হোসেন বলেন, এ বছর প্রায় ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন কম হয়েছে। এর ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় কোল্ড স্টোরেজে ১০ লাখ টন আলু কম ঢুকেছে। অন্যান্য বছর ৫৫ লাখ টন আলু আসে কোল্ড স্টোরেজে, এ বছর এসেছে ৪৫ লাখ টন। আর করোনার কারণে আলুর ব্যবহার বেশি হয়েছে। একই সঙ্গে বন্যায় অন্যান্য সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় আলুর চাহিদা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি আলু আবাদ এক মাস পিছিয়ে গেছে। অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নতুন আলুর চাষ হয়। এ বছর সেটা পিছিয়ে গেছে। তাই আলুর বাজারে ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেন, গত ১৫ দিন আগে হঠাৎ করে আলুর দাম বেড়ে যায়। পণ্যের দাম নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। এখন আলুর শেষ সময়, তাই চাহিদা বেশি যোগান কম হওয়ায় এমনটা হয়েছে। কোল্ড স্টোরেজের আলুর ৩০ ভাগ সময় আছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা দেখছেন চাহিদা বেশি সরবরাহ কম তাই তারা দামটা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এখন আমরা আলু ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করছি কোল্ড স্টোরেজে যে আলু আছে তা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। যাতে করে আলুর দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকে, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।  

কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে দর নির্ধারণ করেছে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা। আমরা এই বিষয়টি আবার পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছি। বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে আলুর খরচ পড়ে ২২/২৩ টাকা, সেটা যদি ২৩ টাকাই রাখা হয় তাহলে কেউ বিক্রি করবে না। বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজে ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। এজন্য বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ের আলুর দাম কত টাকা নির্ধারণ করলে ভালো হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী-কৃষক ও কোল্ড স্টোরেজসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছি। বাণিজ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাব কিছুটা বিবেচনা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।

মোস্তাক হোসেন আরো বলেন, আমি মনে করি ভোক্তাদের সাধ্যের মধ্যে যেন দাম থাকে। এ নিয়ে শিগগিরই তারা বসবেন। আমার মনে হয় দুই-একদিনের মধ্যে বিষয়টি পর্যালোচনা করে একটা দাম নির্ধারণ করে দেবে মন্ত্রণালয়। দেশের স্বার্থে, ভোক্তাদের স্বার্থে সব ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রির অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা (ব্যবসায়ীরা) কোল্ড স্টোরেজে গিয়ে যার যে পরিমাণ আলু আছে বিক্রি করে দেন। সরকার যে রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই দামে বিক্রি করেন ভোক্তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে, কোনো ঘাটতি নেই; আর আপনি বলছেন ১০ লাখ টন ঘাটতি রয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাক হোসেন বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী, আমি জানি এ বছর আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। আলু যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে আলু গেলো কোথায়? আগামী সাতদিন বা এক মাস পর দেখবেন আমরা যেটা বলেছি সেটা সত্য নাকি তাদেরটা সত্য। এ বিষয়ে তো আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি না। তবে আমরা বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

বাংলাদেশে মোট কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা ৪০৭টি, বর্তমানে চালু আছে ৩৯৩টি কোল্ড স্টোরেজ। এতে ৪৫ লাখ টন আলু মজুদ রাখা হয়েছে। গত বছর যা ছিল ৫৫ লাখ টন। এ বছর প্রায় ১০ লাখ টন মজুদ কম হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজম, অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মো. হাফিজুর রহমান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রি. জে. মো. আরিফুল হাসান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আল-বেরুনি এবং র‌্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই-এর প্রতিনিধি, কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও পাইকারী আলু ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।