ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশি নিরাপত্তায় রিফাতের পরিবার

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ও শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
পুলিশি নিরাপত্তায় রিফাতের পরিবার রিফাতের বাবার (মাঝে) সঙ্গে দু’জন পুলিশ সদস্য আছেন, ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর)।

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

 

এদিকে, রায়কে কেন্দ্র করে নিহত রিফাতের পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার (২৯ মেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই মামলার বাদী ও রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের নিরাপত্তার স্বার্থে সাদা পোশাকে দু’জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

রিফাতের বাবা বাংলানিউজকে বলেন, সকাল থেকেই দু’জন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। তাছাড়া বাড়িতেও রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ায় সরকারের প্রতি আমি খুবই খুশি। তবে নিরাপত্তার চেয়ে বেশি বড় হলো রায়। এ রায়ে সব আসামির ফাঁসির আদেশ হবে, এ প্রত্যাশা করি।

এদিকে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকেই আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। কারাগার থেকে আদালত চত্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা বলয় থাকবে বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তার বিষয়ে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকাল থেকেই কারাগার থেকে আদালত চত্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা বলয় থাকবে। এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করেন সহপাঠীরা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ/ ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা।
পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।
প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বিষয়টি আমলে না নিলেও ফেসবুকে এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বরগুনার পুলিশ প্রশাসন। দেশব্যাপী ওঠে সমালোচনার ঝড়। এরপর চেকপোস্ট, কড়া নিরাপত্তা ও তল্লাশিতে একে একে ধরা পড়ে অভিযুক্তরা।
হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর গত বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
পরে গত বছরের ১৭ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে গত বছরের ২০ জুলাই পাঁচদিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিন একই আদালতে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
এরপর ৪৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরগুনার কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন মিন্নি। জামিনের পর থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় বাড়িতে ছিলেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী সদর থানার কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) হুমাউন কবির ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দুইভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন রয়েছেন। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বী, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি প্রাপ্ত বয়স্কদের অভিযোগ পত্র গঠন করা হয়। ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় শিশু আদালতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্ত বয়স্ক আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামি পরীক্ষা করা হয়।
এসময় আদালতে উপস্থিত সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য দেন। আগামী ৫ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত।
মঙ্গলবার শিশু আদালতের হাজতি-আসামি রিসান, রিফাত হাওলাদার, রায়হান, অলিউল্লাহ (অলি), নাঈম, তানভীর এবং জামিনে থাকা, চন্দন, রাতুল, নাজমুল হাসান, নিয়ামত, মারুফ বিল্লাহ, মারুফ মল্লিক এবং আরিযান শ্রাবণ উপস্থিত ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।