ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রামু ট্র্যাজেডির ৮ বছর: বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
রামু ট্র্যাজেডির ৮ বছর: বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা রামুর ঐতিহাসিক স্থাপনা, ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে সাম্প্রদায়িক হামলার আট বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর)। আটটি বছর পেরিয়ে গেলেও এ সংক্রান্ত ১৮টি মামলার মধ্যে একটিরও বিচার কাজ শেষ হয়নি এখনও।

উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবে বিচার কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাষ্য, শুরু থেকেই এ সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না। সব মামলার বাদী পুলিশ। আসামিও করেছে পুলিশ। পুলিশের ইচ্ছেমতেই এসব মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। যেখানে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং বহুল আলোচিত অনেকেরই নাম নেই।

ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধবিহার, ২৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরও ছয়টি বৌদ্ধবিহার এবং শতাধিক বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উখিয়া ও টেকনাফে আরও চারটি বৌদ্ধবিহারে হামলা চালানো হয়। এতে পুড়ে যায় এসব বিহারে থাকা হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক সব নিদর্শন।

এসব ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে রামু থানায় আটটি, উখিয়ায় সাতটি, টেকনাফে দুইটি ও কক্সবাজার সদর থানায় দুইটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরমধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ৩৭৫ জন। পরবর্তীকালে এসব মামলায় ৯৯৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরমধ্যে রামুর আটটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল ৪৫৮ জনকে।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের কোর্ট পরিদর্শক চন্দন কুমার চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, মাত্র একদিন আগে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আসলে আমি এখনও অবগত নই। তবে আমি যতটুকু জেনেছি, ১৯টি মামলার মধ্যে রামু থানায় জনৈক সুধাংশু বড়ুয়ার করা মামলাটি দু’পক্ষের আপস মীমাংসার ভিত্তিতে খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

বাকি ১৮টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। কিন্তু বর্তমানে মামলাগুলোর সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে বিচার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, মামলার সাক্ষীদের আনার জন্য ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে মামলাগুলোর কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে আবার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত সাক্ষীর অভাবে মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব মামলার সাক্ষী বেশির ভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। তারা ঠিকমতো হাজির হচ্ছেন না। হলেও উল্টা-পাল্টা বলছেন বলে ধারণা।

তিনি বলেন, এসব মামলার মধ্যে চারটি মামলা পুনরায় তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার। তারা ৩৬ জন নতুন আসামিকে চার্জশিটভুক্ত করেছে। বর্তমানে এসব মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ৯৩৬ জন।

তবে পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত কার্যক্রম শেষে এমনভাবে মামলাগুলোর অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, সাক্ষী পাওয়া না গেলেও আসামিরা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে এ রকম বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, এসব দেখে শনাক্ত করে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আদালত চাইলে এদের শাস্তি দিতে পারে।

রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, এসব মামলা নিয়ে বরাবরই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে সংশয়। কারণ সব মামলার বাদী পুলিশ। পুলিশ এজাহারে কাকে আসামি করেছে আবার কাকে অভিযোগপত্রে এনেছে, কাকে বাদ দিয়েছে এ বিষয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায় কিছুই জানতো না। কিন্তু পরে দেখা গেছে, যারা মিছিলের সামনের সারিতে ছিল, যারা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দিয়েছে, এরা কেউই পুলিশের অভিযোগপত্রে নেই।

তিনি বলেন, প্রকৃত অপরাধীরা বাদ পড়ায় এবং বর্তমানে আসামিরা সবাই জামিনে থাকায় সাক্ষীরাও সাক্ষ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না।

‘কিছু দুর্বৃত্তের কারণে রামুর হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যদি এভাবে পার পেয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
এসবি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।