ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: ৬ আসামির চারজনই গ্রেফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: ৬ আসামির চারজনই গ্রেফতার ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তরা

সিলেট: সিলেট মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৬ আসামির চারজনকেই গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
 
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযানে তাদের একজনকে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে এবং ৩ জনকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ ও নবীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।


 
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মামলার প্রধান আসামি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়া গ্রামের তাহিদ মিয়ার ছেলে এমসি কলেজের ৫ম ব্লক হোস্টেলের বাসিন্দা সাইফুর রহমান (২৮), মামলার তৃতীয় আসামি হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার শাহ মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে এমসি কলেজ হোস্টেলের ৭নং ব্লকের ২০৫নং কক্ষের বাসিন্দা শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), মামলার ৪ নম্বর আসামি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে বর্তমানে শাহপরান রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা অর্জুন লস্কর (২৫) এবং মামলার ৫নং সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম (২৫)।
 
পুলিশ জানায়, রোববার সকালে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান (২৮) ছদ্মবেশে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এদিন সকালে নগর গোয়েন্দা পুলিশেরে পরিদর্শক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা মনতলা এলাকা থেকে অর্জুনকে গ্রেফতার করে।
 
রোববার রাত ৮টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকায় র‌্যাবের হাতে আটক হন মামলার আরেক আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫)। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চত করা না হলেও রনির আত্মীয় চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

আনন্তপুর এলাকার একজন অ্যাডভোকেটের বাসায় রনি র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণ করেন। রনি এমসি কলেজে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের অনিয়মিত ছাত্র। তিনি ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ২৫০ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
 
পরবর্তীতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণধর্ষণ মামলার ৫ নম্বর এজাহার নামীয় আসামী রবিউল ইসলামকে হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে।
 
এছাড়া এখনো পলাতক রয়েছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ি এলাকার মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫) ও সুনামগঞ্জ সদরের নিসর্গ-৫৭ বাসার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে মেজরটিলা দিপীকা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮)।
 
সিলেট শাহ পরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, রাতে মামলার আসামি রনি ও রবিউলকে গ্রেফতারের খবর জানতে পেরেছি। এর আগে সকালে গ্রেফতারকৃত সাইফুর ও অর্জুনকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
 
সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বাংলানিউজকে বলেন, রোববার দিনে দুই আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। রাতে আরো দুই আসামি গ্রেফতারের খবর জেনেছি। এছাড়া পলাতকদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
 
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ছাত্রলীগের ৬ জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পত্তিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
 
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকার যোগে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকেলে এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা টিলাগড় কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী।
 
এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ৬ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরান থানায় এ মামলা (২১(৯)২০২০) দায়ের করেন ধর্ষিতার স্বামী।
 
এছাড়া ঘটনার পর অভিযানে নেমে সাইফুরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরান (র.) থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা (নং-২২(৯)২০২০) দায়ের করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
এনইউ/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।