ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আমি তো একরাতে বাংলাদেশকে পাল্টে দিতে পারব না : সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১২
আমি তো একরাতে বাংলাদেশকে পাল্টে দিতে পারব না : সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী

চট্টগ্রাম : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করার আগেই সরকারি বরাদ্দ বিতরণে ‘টুকটাক কিছু’ অনিয়ম হয়েছে বলে স্বীকার করে নিলেন চট্টগ্রামের ক্ষমতাধর সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। তবে এতে নিজের জড়িত থাকার কথা নাকচ করেছেন তিনি।



শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মাত্র তিন বছর আগে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। সরকারি বরাদ্দ বিতরণে টুকটাক কিছু অনিয়ম হতে পারে। এটা তো বাংলাদেশ। আমি তো এক রাতে বাংলাদেশকে পাল্টে দিতে পারব না। ’

তিনি বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দের চাল, গম, টাকা বিতরণের জন্য আমি শুধু সাংসদ হিসেবে সুপারিশ করেছি। বিতরণে অনিয়ম হলেও আমি কারও ভাগ নিয়েছি কিনা সেটা দেখতে হবে। আমি যদি ভাগ নিই, আত্মসাৎ করি সেটা হবে আমার দুর্নীতি। কিন্তু আমি আত্মসাৎ করেছি এমন প্রমাণ নেই। ’

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমরা যারা সংসদ সদস্য আছি, আমাদের পেছনে ডিজিএফআই, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক’র লোকজন লেগে থাকে। আমাদের পক্ষে অনিয়ম, দুর্নীতি করা এত সহজ নয়। ’

উল্লেখ্য চট্টগ্রাম-১১ (পটিয়া) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর প্রেক্ষিতে শনিবার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী নগরীর জামালখানে একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদল নয়, দলের মধ্যে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বিগত পৌরসভা নির্বাচন থেকে এ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমি কারও নাম বলব না, তাদের নাম মুখে নিতেও আমার ঘৃণা হয়। কারণ তারা আমার প্রতিপক্ষ নয়। আমার প্রতিপক্ষ হওয়ার মতো যোগ্যতাও তাদের নেই। ’

তিনি বলেন, ‘যারা ভাবছেন, পটিয়ার এমপিকে বোধহয় আর কোনোদিন সরানো যাবে না, তাই আমরাও বোধহয় আর কোনোদিন এমপি হতে পারব না, এরাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তা আমি আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা লেখা হচ্ছে। কিন্তু আমি মিডিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চাই না। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দুদকে দাখিল করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত হাস্যকর এবং বানোয়াট। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্যাকেট তারা এখনও খুলেননি। ’

তাহলে দুদক’র আদেশের কপি পত্রিকায় গেল কিভাবে, এমন প্রশ্নও তুলেন সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী।

উল্লেখ্য, সাংসদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে আছে, পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের লাউয়ারখীল জামে মসজিদে বরাদ্দ হওয়া টিউবওয়েল না দেওয়া এবং আশিয়া ইউনিয়নের কমলাপাড়া গ্রামে লোকনাথ মন্দিরের নামে মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন যুবককে চালের বিনিময়ে কয়েক হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া। তবে সেখানে লোকনাথ মন্দিরের কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

টিউবওয়েল বরাদ্দ না দেওয়ার অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘মসজিদের টিউবওয়েল নিয়ে যে অভিযোগটি দুদকে করা হয়েছে ও মসজিদ কমিটির তথাকথিত সভাপতি হিসেবে যার নাম খবরে উল্লেখ করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে ওই লোকের সঙ্গে মসজিদ কমিটির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যারা মসজিদ কমিটির প্রকৃত সভাপতি-সম্পাদক তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

লোকনাথ মন্দিরের বিষয়ে সাংসদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই লোকনাথ মন্দিরে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনকে সভাপতি-সম্পাদক বানানো হয়েছে এবং তাদের হাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ’

এ সময় সাংসদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পটিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তিমির বরণ চৌধুরী বলেন, ‘লোকনাথ মন্দিরের অস্তিত্ব আছে, সেখানে সাইনবোর্ডও আছে। আর পটিয়া উপজেলায় যাওয়ার সুবিধার্থেই মন্দিরের লোকজন তাদের বরাদ্দ নিয়ে যাবার জন্য কয়েকজন মুসলমান সম্প্রদায়ের যুবককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাদের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে টাকা মন্দিরের কাছেই গেছে। ’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বিজন চক্রবর্তী, পৌরসভা মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তিমির বরণ চৌধুরীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ।

উল্লেখ্য, বিগত সংসদ নির্বাচনের বেশ কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া ব্যবসায়ী সামশুল হক চৌধুরী প্রথমবার নমিনেশন পেয়েই পটিয়া থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেও খোদ তার নির্বাচনী এলাকা পটিয়ায় দলের একাংশ তাকে মেনে নিতে পারেনি।

এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার হস্থক্ষেপেরও অভিযোগ আছে। এতে তার উপর ক্ষুব্ধ বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরাও।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার হস্থক্ষেপের কথা পরোক্ষভাবে স্বীকারও করে নিয়েছেন সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিভিন্নভাবে বন্দরে ঢুকতে চেয়েছিলেন। আমি ঢুকতে দিইনি। তিনি বন্দরের কোটি কোটি টাকার জমি দখলে রেখেছিলেন। আমি উদ্ধার করিয়েছি। একজন যুদ্ধাপরাধী বন্দরের পাঁচটি জেটি একাই হ্যান্ডলিং করতে চেয়েছিলেন, আমি করতে দিইনি। এটা যদি আমার হস্থক্ষেপ হয় আর এতে যদি কেউ ক্ষুব্ধ হন, তাহলে আমার বলার কিছু নেই। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৮০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।