ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় এন্টারপ্রাইজ মালিকরা: গবেষণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় এন্টারপ্রাইজ মালিকরা: গবেষণা ফাইল ছবি

ঢাকা: লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, ব্র্যাকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা প্রশিক্ষণ নেয়নি এমন এন্টারপ্রাইজের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ করছে প্রশিক্ষণ নেওয়া এন্টারপ্রাইজগুলো। প্রায় ২০০০ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং (হালকা প্রকৌশল) প্রতিষ্ঠানের ওপর করা ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

লকডাউনের আগে ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এন্টারপ্রাইজগুলো যেমন লাভ করতো, লকডাউনের পরেও তাদের লাভের পরিমাণে তারতম্য হয়নি। ব্র্যাকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা প্রশিক্ষণের গুরুত্ব এই উপাত্ত থেকে বোঝা যায়।  

বিআইজিডি আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম ও বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আতিয়া রহমান এই উপাত্ত তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে বিশ লাখের বেশি মানুষ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বা হালকা প্রকৌশল খাতে জড়িত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বা এসএমই খাতের সবচেয়ে বড় অংশ এই লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত থেকে আসছে দেশের মোট জিডিপির ২ শতাংশ। অন্যান্য বিভিন্ন খাতের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব ছিল বেশি।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লকডাউনের সময়ে এই লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এন্টারপ্রাইজের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ পুরোপুরি এবং ২৯ শতাংশ আংশিকভাবে খোলা ছিল। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ৬১ শতাংশ এন্টারপ্রাইজ পুরোপুরি খুলেছে এবং এক-তৃতীয়াংশের বেশি তাদের নিয়মিত কাজের সময় কমিয়ে এনেছে। কাজের পরিমাণ বাড়লেও ক্ষুদ্র ও অপ্রাতিষ্ঠানিক এন্টারপ্রাইজে কোভিড-১৯ এর আগের সময়ের চেয়ে বিক্রির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, কাজের ধরনের কারণে বিউটি পার্লার, হোটেল, টেইলরিং-এর মতো খাতসমূহ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং ব্যবসায়িক ধসের মুখে আছে।
কাজের ধরনকে হিসাবের বাইরে রেখে দেখা যায়, তুলনামূলক ছোটো এন্টারপ্রাইজগুলো কোভিডের কারণে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কোভিডের আগে যেসব এন্টারপ্রাইজের তুলনামূলক কম পুঁজি ছিল তাদের লকডাউন পরবর্তী সময়ে পুনরায় আগের মতো কাজ শুরু করার হার কম। একইভাবে, লকডাউনের পর তুলনামূলক কম পুঁজির এন্টারপ্রাইজে ৪৯ শতাংশ ধসের মুখে পড়েছে, উল্টোদিকে বেশি পুঁজির এন্টারপ্রাইজে এই হার ২৫ শতাংশ।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এর কারণে সরবরাহ ব্যহত হওয়ায় ৬১ শতাংশ এন্টারপ্রাইজ কাঁচামাল সংকটে ভুগেছে। যার ফলে বেশিরভাগ এন্টারপ্রাইজকে হয় উৎপাদন কমাতে হয়েছে না হয় পণ্যমূল্য বাড়াতে হয়েছে। যদিও এই কৌশল পুরোপুরি যথেষ্ট নয় এন্টারপ্রাইজগুলোর জন্য। কারণ, এন্টারপ্রাইজগুলোকে বিক্রয় ও লাভের পরিমাণ কমে যাওয়ার সঙ্গে ভাড়া, ইউটিলিটি বিল, কর্মীদের বেতন ইত্যাদির মতো ব্যয় বহন করে যেতে হচ্ছে। এসব কারণে ৭৫ শতাংশ এন্টারপ্রাইজ মালিক তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ব্র্যাকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা প্রশিক্ষণ না পাওয়া এন্টারপ্রাইজের চেয়ে প্রশিক্ষণ পাওয়া এন্টারপ্রাইজগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে এবং বেশি লাভ করছে। অর্থাৎ, এ ধরনের প্রশিক্ষণ আরও বেশি এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া গেলে পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে এই খাত।

অন্যদিকে, এসএমই খাতের জন্য সরকারঘোষিত প্রণোদনাও এন্টারপ্রাইজগুলোকে এই সংকট থেকে উত্তরণের আশা জাগিয়েছে। তবে মাত্র ৬৩ শতাংশ এন্টারপ্রাইজ এই প্রণোদনার কথা জানে এবং মাত্র ৩ শতাংশ এই প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছে এবং আরও অবাক করা তথ্য হলো, জরিপে অংশ নেওয়া ১৯৬০টি এন্টারপ্রাইজের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি এন্টারপ্রাইজ এই প্রণোদনা লাভ করেছে। মহামারি শুরুর আগে সবচেয়ে বেশি লাভ করা এন্টারপ্রাইজসমূহ লকডাউনের সময় খোলা ছিল বা তাদেরই বিক্রয়ের পরিমাণ এখন সবচেয়ে বেশি। আবার সরকারের প্রণোদনার জন্য আবেদন করার হার তাদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি।

এন্টারপ্রাইজ মালিক ছাড়াও এসএমই খাতে কর্মরত কিছু নারী-পুরুষের ওপর জরিপ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যাপারটি নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি অনুসরণ করেছেন এবং বেশিদিন কাজ করেছেন। যদিও নারীদের চাকরি হারানোর পরিমাণ বেশি দেখা গেছে এবং আয় পুনরুদ্ধারের (ইনকাম রিকভারি) ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে তারা পিছিয়ে আছেন।

আসাদুল ইসলাম ও আতিয়া রহমান তাদের উপস্থাপনায় আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই লিঙ্গ বৈষম্যকে উপেক্ষা করা হলে বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়ন ঝুঁকির মুখে পড়বে।

আরও বক্তব্য দেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিআইজিডির সিনিয়র অ্যাডভাইজর মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নারায়ণ দাস, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
এসই/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।