ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতি, জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতি, জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় একটি পরিবারকে বিভিন্নভাবে সুযোগ সুবিধা দিতে গিয়ে এলাকার হাজারো মানুষেকে দুর্ভোগে ফেলেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। স্বজনপ্রীতি করে একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থার মুখ সরু ও অন্যটি বন্ধ করে রাখায় গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।

পানিতে ভেঙে গেছে স্থানীয়দের ঘর, রান্নাঘরসহ ব্যবসায়ীদের দোকান, নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন পণ্য।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ভজনপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতির কারণে পুরো বাজার জলমগ্ন। বাজারের মধ্যে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা একটি ড্রেন থাকলেও ওই ড্রেনের শেষ মাথা সরু করে রাখা হয়েছে। ড্রেন নির্মাণের পর স্লাব দিয়ে ঢেকে মাটি চাপা দিয়ে উপরে দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয় আব্দুল জলিল। ওই ঘর যেন ভাঙতে না হয় তাই স্থানটি বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান ড্রেনের মাঝখানে প্রশস্তকরণ কাজ একাধিকবার করেছেন। এ কারণে পুরো বাজার জলমগ্ন হয়ে থাকে। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ভেসে যায় পুরো ভজনপুর বাজার।

এমনকি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা রমজান আলী, তসলিমদ্দীন, ফারুক হোসেনসহ অনেকের বাড়িতে জলাবদ্ধতায় কোমর পর্যন্ত পানি জমে গেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় পরিবারগুলো।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ড্রেনটি শুরু হয়েছে ভজনপুর খাদ্যগুদাম সংলগ্ন সড়ক থেকে আর শেষ হয়েছে ভজনপুর পুরাতন করতোয়া সেতুর পশ্চিম প্রান্তে। এর মধ্যে সব সময় জলমগ্ন থাকে ভজনপুর টি-ইসলাম মার্কেট, হাইওয়ে থানা সড়ক, গ্রামীণ ব্যাংক সড়ক, পুরাতন পরিষদ সড়ক, ভজনপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট ও সড়ক, জাকের পার্টি মসজিদ সড়ক। তবে সব থেকে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে ভজনপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট থেকে শুরু করে জাকের পার্টি মসজিদ পর্যন্ত। এতে করে কোমর পর্যন্ত জলাবদ্ধতার পানিতে অনেকেই নামাজে যেতে পারছে না।

অন্যদিকে, প্রায় সারাবছরই জলমগ্ন থাকে টি-ইসলাম মার্কেট ও হাইওয়ে থানা সড়ক এবং কলেজ রোড জাকের পার্টি মসজিদ সড়ক। তবে এবার অতি বৃষ্টিতে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রেনের শেষ মাথা সরু হওয়ায় এবার অতি বৃষ্টিতে সড়কের হাঁটু পানি আশপাশের দোকান ঘরে গিয়েও ঢুকছে। অনেক দোকানের মালামাল পানিতে ভিজে গেছে।  

আরো দেখা যায়, তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়কের দক্ষিণ পাশ দিয়ে করতোয়া নদী পর্যন্ত নির্মিত নতুন ড্রেনটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে করে লাগাতার ভারী বর্ষণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় ডুবে গেছে গেছে আশপাশের বাড়িসহ রাস্তাগুলো।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন, ফারুক, সোহেল ও সেলিমসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, দুইটি ড্রেনের মধ্যে একটির মুখ বন্ধ থাকায় এবং অপরটির মুখ একেবারে সরু হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কোমর পর্যন্ত পানি জমে গেছে চারপাশে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধান না করে চেয়ারম্যান শুধুমাত্র একটি পরিবারের সুবিধার কথায় ভাবছে। ইতোমধ্যে ওই একই স্থানে ড্রেনের ওপর নতুন করে আরো দুটি বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পানি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সবাইকে।

স্বজনপ্রীতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোকছেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি দেখছি।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে জানান, আমরা ভজনপুর বাজারের জলাবদ্ধতার খবর পেয়েছি। সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।