ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ

অভিযুক্ত এক ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
অভিযুক্ত এক ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার উদ্ধার করা অস্ত্র, ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সাত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে সাইফুর রহমান নামে এক  ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই ছাত্রাবাসে সাইফুরের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে-একটি পাইপগান, চারটি রামদা’, একটি ছুরি ও দু’টি লোহার পাইপ।

 

মহানগর পুলিশের শাহ পরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্র মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।  
 
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর সোয়া ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় তাদের ধরতে অভিযান চলছিল।  

গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন - এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মাছুম,  এম সাইফুর রহমান, অর্জুন, রাজন আহমদ এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল এবং তারেক আহমদ।
 
তাদের মধ্যে সাইফুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে এবং তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা।
 
শুক্রবার দিনগত রাত ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে ধরা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান মহানগরের শাহ পরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
 
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জোর্তিময় সরকার বাংলানিউজকে বলেন, গণধর্ষণের শিকার নারীর স্বামীর বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়। ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার বিকেলে স্ত্রীসহ টিলাগড় এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। এসময় চার/পাঁচজন তরুণ তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যান। পরে ছাত্রাবাসের ভেতরের একটি রাস্তায় তারা তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ছাত্রাবাসে গিয়ে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে। ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
 
এদিকে, স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর খবর পেয়ে টিলাগড় এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।  ধর্ষণের ঘটনাটি প্রথম দিকে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা আপোষ মীমাংসারও চেষ্টা চালান। পুলিশও প্রথম দিকে ঘটনাটি গণমাধ্যমের কাছে এড়িয়ে যায়। ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় দীর্ঘ  সময় ক্ষেপণের কারণে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিতে সক্ষম হন। অবশ্য পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ধাপাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ নেতারা।  
 
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকারে করে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকেলে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ওই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা টিলাগড় কেন্দ্রীক রণজিৎ গ্রুপের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

সিলেট মহানগরের শাহ পরান থানার ওসি কাইয়ুম চৌধুরী আপোষ মীমাংসার চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খবর পেয়েই আমরা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি। পরে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন: 

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণে অভিযুক্তরা 

স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে  

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
এনইউ/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।