ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মার ভাঙনে দেড় দশকে বিলীন ৬ বিদ্যালয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
পদ্মার ভাঙনে দেড় দশকে বিলীন ৬ বিদ্যালয় স্কুল

রাজশাহী: সর্বগ্রাসী পদ্মার ভাঙন কিছুতেই থামছে না। চোখের সামনেই পদ্মার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মানুষের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু।

দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পদ্মা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশে নিচে বসবাস করছে রাজশাহীর চরাঞ্চলের শত শত পরিবার।  

ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুই ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। পদ্মার ভাঙনে গত দেড় দশকে রাজশাহীতে বিলীন হয়েছে ছয়টি বিদ্যালয়। একদিকে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন, অন্যদিকে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনও অনিশ্চিতয়তার মুখে পড়েছে।  

সম্প্রতি রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে ৩৭ বছর আগের প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। কয়েক বছর আগে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টির দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভাঙন শুরু হওয়ায় বিদ্যালয়টির আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের মীরগঞ্জ, পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর হয়ে গোকুলপুর ও কিশোরপুর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ভাঙতে থাকে পদ্মা। ২০০৪ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত জায়গাগুলোতে বালুর বস্তা দিয়ে ঠেকানোর পর ২০০৫ সালে ব্লক বসায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে ব্লক বসানোর কয়েকদিন পর সেগুলো নদীতে ভেসে যায়। ফলে কিছুতেই থামছে না নদী ভাঙন।  

জানা যায়, ১৯৩৫ সাল থেকে দুর্গম পদ্মা চরের মধ্যে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে নয়টি প্রাথমিক ও দু’টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশী ফতেপুর, লক্ষ্মীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালীদাসখালী, পূর্বচকরাজাপুর এলাকায়। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে চকরাজাপুর ও পলাশী ফতেপুর এলাকায়।

গত দেড় দশকে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চরাঞ্চলের ছয়টি বিদ্যালয়। ২০০৫ সালে ভাঙনের কবলে পড়ে বাঘা উপজেলার চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তী বছরগুলোতে ভাঙনের কবলে পড়ে ঠিকানা হারায় একই উপজেলার পলাশী ফতেপুর, আতারপাড়া, চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। চলতি বছরের জুনে চরকালীদাসখালী এবং সেপ্টেম্বরে লক্ষ্মীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ঠিকানা হারালো।

পদ্মায় বিলীন লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, চোখের সামনে বিদ্যালয়টি পদ্মায় তলিয়ে যাচ্ছে। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম কিছুই করতে পারলাম না।

বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এসব পরিবারের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসতবাড়ি গড়ে তুলে বসবাস করছেন।

পাকুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, নদী ভাঙন রোধে ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান বলেন, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় গত বছর থেকেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষা করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এর সমাধান আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
এসএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।