ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে চলাচলকারী প্রতি লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার কর্তৃক সড়কে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও প্রতিনিয়ত নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
তবে অভিযুক্ত লেগুনা মালিক সমিতি বলছেন, এটা কোনো ভাবেই চাঁদা নয়, এটা লাইনের আনুষঙ্গিক খরচ। সড়কে গাড়ি না রেখে বিভিন্ন গ্যারেজে রাখা হয়। এছাড়া গাড়ির সার্বিক চলাচল ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বরত লাইনম্যানদের খরচ হিসেবে এ টাকা নেওয়া হয়।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) যাত্রাবাড়ী এলাকার লেগুনা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে চাঁদাবাজির এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী-ঢাকা মেস রুটে প্রায় এক’শ লেগুনা চলাচল করে। প্রতিনিয়ত এসব লেগুনা থেকে ৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। লেগুনা মালিক সমিতি শাখা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী এ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ রুটে তিনটি লেগুনার মালিক মো. হাবীব বাংলানিউজকে জানান, বেশকিছুদিন আগে সরকার সব সড়কে চাঁদাবাজি নিষিদ্ধ করে। করোনার পরবর্তী সময়ে গাড়ি চলাচল শুরু হলে চাঁদাবাজির ধরন পাল্টে যায়। লাইন খরচের নামে গাড়িপ্রতি ৭০ টাকা দিতে হয়। আর কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, যেই গাড়ি গ্যারেজে রাখা হবে, সেটার না হয় গ্যারেজ ভাড়া দেওয়া হলো। কিন্তু অনেক গাড়ি গ্যারেজেই রাখা হয় না। আবার কিছু গাড়ি চলাচলের মধ্যেই থাকে, গ্যারেজে রাখা হয় না। কিন্তু সেসব গাড়ি থেকেও গ্যারেজ ভাড়ার নামে বাধ্যতামূলক ৭০ টাকা দিতে হয়।
এর আগে চাঁদাবাজির বিরূদ্ধে বিভিন্ন জনকে দোষী করে নিজেই একটি মামলা দায়ের করেন আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী। মামলার পর ওই চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আনোয়ার নিজেই নতুন কৌশলে চাঁদা আদায় করছেন।
তবে প্রতিনিয়ত আদায় করা এ অর্থের জন্য কোনো ধরনের রশিদ দেওয়া হয় না বলেও জানান লেগুনা মালিক হাবীব।
তবে লেগুনা মালিক সমিতির কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা সবাই চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা জানান, আগে প্রতি লেগুনা থেকে ৪৭০ টাকা আদায় করা হতো, সেটি ছিল চাঁদা। আর এখন মাত্র গাড়িপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা আদায় করা হচ্ছে শুধুমাত্র খরচ বাবদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেগুনা মালিক সমিতির সদস্য বলেন, প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি লেগুনা যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে চলাচল করে। সবগুলো লেগুনাই কিন্তু যাত্রাবাড়ী এনে রাখা হয় না, তাহলে পুরো এলাকাই জ্যাম হয়ে যাবে। লেগুনাগুলো রাস্তায়ও রাখা হয় না, এগুলো বিভিন্ন গ্যারেজে রাখা হয়। সেখানে সিরিয়াল দিয়ে পাঁচটি করে লেগুনা ছাড়া হয়। যেগুলো যাত্রাবাড়ী এসে যাত্রী তুলে। এসব পরিচালনা করতে লাইনম্যানরা দায়িত্বপালন করছেন আবার গ্যারেজ ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। সেজন্যই এ টাকাটা আদায় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ লাইনে পাঁচ জন লাইনম্যান দায়িত্ব পালন করেন। তারা সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি করেন। তাদের প্রত্যেককে দৈনিক ৬০০ টাকা করে বেতন দিতে হয়। এসব লাইনম্যানদের খরচ ও গ্যারেজ ভাড়া বাবদই ওই ৭০ টাকা আদায় করা হয়।
আগে এ রুটে ৪৭০ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো। তবে এখন পুলিশকে জানিয়েই খরচ বাবদ এ সামান্য টাকা আদায় করা হয় বলেও লেগুনা মালিক সমিতির ওই সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্সকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তার থানা এলাকায় এ ধরনের চাঁদাবাজির কোনো খবর নেই। এমন কোনো বিষয় হয়ে থাকলে অন্য থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
পিএম/আরআইএস