গাইবান্ধা: তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশিমবাজার এলাকায় নদী তীরবর্তী মানুষেরা। বন্যা-বন্যা পরবর্তী সময়ে টানা ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েকশ বসতভিটা-ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গৃহহীন মানুষগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউবা দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র ও গাছপালাসহ সম্ভাব্য জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউই খোঁজ রাখেন না অসহায় এ মানুষগুলোর। ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় কার্যকরী কোনো ভূমিকা রাখেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কাশিমবাজার এলাকার লাখির পাড়ার বাসিন্দা আলম মিয়া, জামিল মিয়া ও সোনাভান বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার শুরু থেকেই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ভাঙন আতঙ্কে রাতে দুচোখে ঘুম আসে না। রাতের পর রাত নির্ঘুম পার হয়েছে বুকে কাঁপুনি নিয়ে। কেবল একটাই চিন্তা কখন যে ঘরসহ বসতভিটা নদীতে তলিয়ে যায়। অবশেষে হলোও তাই। তিস্তায় বিলীন হলো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও। আমাদের মত আরো অনেকে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন।
ওই এলাকার পাড়াসাদুয়া গ্রামের বাসিন্দা আয়নাল মিয়া, আব্দুল মিয়া ও এনামুল বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমিতে-আত্মীয়ের বাড়িতে ছাপড়া তুলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখন কি করবো কোথায় যাব ভেবে দুচোখে অন্ধকার দেখছি।
একই এলাকার মাদারীপাড়ার বাসিন্দা হামিদুল, সমশ উদ্দিন ও শামসুল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব-অসহায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করছি।
হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই। ফলে আগের ধারাবাহিকতায় এবারের বন্যা-বন্যা পরবর্তী সময়ে শত-শত বসতবাড়ি-ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চলমান ভাঙনে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পাশাপাশি নদীগর্ভে বিলীন হবে নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ দাখিল মাদরাসা ও কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সবসময়ই অসহায় মানুষের পাশের দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। আর সে কারণেই এ ধরনের অভিযোগ উঠছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জেলায় নদী ভাঙন ঠেকাতে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাইবান্ধায় থেকে কাশিমবাজার এলাকার দূরত্ব অর্ধশত কিলোমিটারের বেশি। যাতায়াতও বেশ দুর্গম। তারপরেও ওই এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
আরএ