ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় অবাধে চলছে ‘প্রকৃতির ফিল্টার’ শামুক-ঝিনুক নিধন 

মুস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
পাবনায় অবাধে চলছে ‘প্রকৃতির ফিল্টার’ শামুক-ঝিনুক নিধন  ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: পাবনা বিল অঞ্চলগুলোতে বর্ষার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে অবাধে চলছে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ। প্রতিবছর বর্ষার এই সময়ে পাবনার বিভিন্ন বিল অঞ্চল থেকে ব্যাপক হারে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়।

স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা অসাধু একটি চক্রের মাধ্যমে বাড়তি অর্থের লোভে প্রতিদিন বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। আর এই কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ, মাটি ও পানিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে।  

অবাধে শামুক নিধনের কারণে জলজ প্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে পরিচিত ধীরগতির এই প্রাণী নির্বিচারে সংগ্রহ ও নিধনের কারণে প্রকৃতির ওপর দারুণ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন প্রকৃতি প্রেমী ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।  

জানা যায়, বর্ষার এই সময়ে দেশের প্রতিটি উন্মুক্ত জলাশয়ের বিশেষ করে খাল, বিল, হাওর, বাওড়ের বংশ বিস্তার করে শামুক ও ঝিনুক। প্রকৃতিকভাবে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ করণের কাজ করে থাকে ধীরগতির শান্ত স্বভাবের প্রাণী শামুক ও ঝিনুক। উন্মুক্ত জলাশয়ের পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে এই প্রাণীরা। শামুক শুধু পানি বিশুদ্ধ করণের কাজই করে না মিঠা পানির মাছের খাবার ও কৃষি জমির মাটির উর্বরতা শক্তির গুনাগুন ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।  

২০১২ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে বন্যপ্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও এই আইন অমান্য করে চলছে শামুক সংগ্রহকারীরা। শামুক সংগ্রহের অপরাধে জেলসহ অর্থদণ্ডের বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে থামছে না শামুক সংগ্রহের কাজ। প্রতিদিন একজন শামুক সংগ্রহকারী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩-৪ বস্তা শামুক সংগ্রহ করে থাকে। প্রতিবস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকায়। এই শামুক স্থানীয় ব্যাপারীরা সংগ্রহ করে যানবাহনে পাঠিয়ে দিচ্ছে খুলনাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মাছের খামারগুলিতে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই শামুক মাছের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করছে। এ জেলা থেকে প্রতি বছর কোটি টাকার শামুক বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানা যায়।
 
স্থানীয় শামুক সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষার এই সময়ে তাদের কাজ থাকে না। চাষাবাদ বন্ধ থাকে। পেটের দায়ে স্থানীয় শামুক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে এই শামুক ধরেন তারা। প্রতিদিন একজন শামুক সংগ্রহকারী ৪০০-৫০০ টাকা আয় করে থাকে।
ছবি: বাংলানিউজ
জেলা অন্যতম শামুকসহ জলজ প্রাণী বিক্রেতা ফাদার এন্টারপ্রাইজের মালিক মুঞ্জুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, জেলা ছোট বড় সব মিলিয়ে ২০ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা স্থানীয় শামুক সংগ্রকারীদের কাছ থেকে শামুক কিনে থাকেন। বর্ষার ৩-৪ মাস এই শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়। দক্ষিণ অঞ্চলের চিংড়ির খামারের মালিকরা এই শামুক কিনে থাকে।

শামুক নিধন বিষয়ে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন থাকলেও সেটির বাস্তবায় নেই বল্লেই চলে। শামুক এবং ঝিনুক আমাদের নিরব বন্ধু। এই শান্ত ধীরগতি স্বাভাবের প্রাণী নিরবে আমাদের উপকার করছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ করণসহ স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করছে শামুক। তাই নির্বিচারে এই শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ বন্ধে প্রশাসনিক ব্যস্থা গ্রহণসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধ ব্যবসায়ীদের কিবরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।  

পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহামুদ বলেন, বিষয়টি সত্যিই ভাববার। আমরা জানিই না এই অঞ্চল থেকে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ হয়ে থাকে। যারা এই কাজটি করছে আমার ধারণা তারাও জানেননা শামুক ধরা আইননত অপরাধ। বিষয়টি নিয়ে ক্যম্পেইন করতে হবে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে।  

জুলাই-অক্টোবর চার মাস চলে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ। জেলা চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদুপুর, সুজানগর, আটঘোড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন বিল থেকে সংগ্রহ হয়ে থাকে এই শামুক। জেলা বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট শামুক সংগ্রহের ঘর রয়েছে। জেলা শেষ প্রান্তে ঈশ্বরদী উপজেলা মুলাডুলি বাজারে রয়েছে শামুকের সবচেয়ে বড় আড়ৎ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।