চাঁপাইনবাবগঞ্জ: করোনা কারো কারো জন্য সর্বনাশ ডেকে আনলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মোহাম্মদ সারওয়ার জাহানের জন্য আর্শিবাদ হয়ে এসেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগদানের ৬ মাসের মাথায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অত্যাধুনিক শীততাপনিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটারের ৫টি এসি খুলে নেওয়াসহ ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। যার অনুলিপি জেলা সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকসহ কয়েকজনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া ৫ করোনা রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দেখিয়ে সরকারের তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং গত মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাসে হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত ৬০০ পিপিই বিক্রি করে ১২ লাখ আত্মসাৎ করেছেন ডা. সারওয়ার জাহান।
প্রতিটি পিপিই সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা দরে এর দাম ১২ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এছাড়াও অন্য সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করে আরো প্রায় ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি উপজেলার রহনপুর বাজারের ইউনুস আলী মাস্টার কেন্দ্রে কোনো সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই স্বাস্থ্য সহকারীরা শিশুদের টিকা দিলে বিষয়টি প্রথম গোমস্তাপুরের সচেতন মহল খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বরাদ্দকৃত সুরক্ষাসামগ্রী আত্মসাতের বিষয়টি। স্থানীয় জানান, একই চিত্র কাজীহাটাসহ উপজেলার ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকেরও।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, গত ১৯ মে থেকে ২৭ মের মধ্যে ৫ করোনা রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দেখিয়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ডা. সারওয়ার। এছাড়া লেবার রুম, ওটি, এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি কক্ষ থেকে ৫টি এসি খুলে নিজের অফিস ঘর, বাসভবন, ডাক্তারদের বিশ্রাম ঘর ও আরএমওর ঘরে লাগিয়েছেন। অথচ সরকারিভাবে নিজ অফিস ঘর ও বাসভবনে এসি ব্যবহারের অনুমতি নেই। এমনকি এসিগুলো মেরামতের কথা বলে কোটেশন দেখিয়ে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎও করেছেন তিনি। এছাড়া ফুলগাছ লাগানোর জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ বাগান থেকে প্রায় ৫০ জাতের গাছ কেটে ফেলেছেন তিনি।
এছাড়াও ডা. সারওয়ারের বিরুদ্ধে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া দুই উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ও জঙ্গি মামলার আসামি ফারিকুল ইসলাম ও আব্দুস সামাদকে টাকার বিনিময়ে স্বপদে বহাল করারও অভিযোগ আছে।
হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হওয়ার অভিযোগে বরখাস্তকৃত ফারিকুলের বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা এবং ২ দফা জেল খাটার পরও তাকে টাকার বিনিময়ে স্বপদে বহাল করায় এ নিয়ে খোদ হাসপাতাল চত্বরেই বেশ সমালোচনা হয়েছে।
আর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে অনিয়মের দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া সামাদকে বহালের জন্য উপজেলায় এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি নিয়ামতুল্লাহ জানান, গোমস্তাপুরে টিকা দানের সময় তার সহকর্মীদের কোনো সুরক্ষাসামগ্রী বারবার বলার পরও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাগানের দায়িত্বে থাকা হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্ট তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ১৭ বছর ধরে গড়ে তোলা ভেষজ বাগানটি অসৎ উদ্দেশে একক ক্ষমতাবলে ধ্বংস করে ফুলের বাগান গড়ে তুলেছেন ডা. সারওয়ার।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির আরএমও ডা. সালাহউদ্দীন অভিযোগ করেন, কোটেশন বিলে স্বাক্ষর না করায় ডা. সারওয়ার তাকে সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে বাদ দেন। পরে তার পছন্দের লোককে কমিটির সদস্য বানিয়ে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. সারওয়ার জানান, সব কার্যক্রমই সিভিল সার্জনকে জানানো হয় এবং তার নির্দেশেই আমি এসব কাজ করেছি।
অন্যদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ডা. সারওয়ারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে বলেন, তাকে প্রধান করে ‘তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন সদর উপজেলার ইউএইচএফপিও আব্দুল মাতিন ও সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নাহিদুল ইসলাম মুন। খুব শিগগির তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত: ডা. সারওয়ার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই পদে যোগ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
আরএ