বরিশাল: ‘ওই দেখা যায় তালগাছ, ওই আমাদের গাঁ, ওইখানেতে বাস করে কানাবগির ছা…কবি খান মহম্মদ মইনুদ্দিনের এই ছড়ায় গ্রামকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন গ্রাম বললেই চোখের সামনে ভেসে আসবে তালগাছের প্রতিচ্ছবি।
আর এ তালগাছ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এখনও।
আর বিজ্ঞান ব্যাখ্যায় তালগাছ বজ্রনিরোধক হিসেবে কাজ করে। এরপর থেকেই গোটা দেশব্যাপী তালবীজ রোপণ করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেরিক্ষতে তাল-ঐতিহ্যকে ফিরে দেখতে এবং তালবীজ রোপণে উৎসাহিত করতে বরিশালের বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী বিএম একডেমি উদ্যোগী হয়।
ওই স্কুলের উদ্যোগে সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) ‘তাল উৎসব-২০২০’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান এই তাল উৎসবের উদ্বোধন করেন।
স্কুল ক্যাম্পাসে আয়োজিত ‘তাল উৎসবে’ দুইভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। একদিকে তালের তৈরি নানা খাবারের সম্ভার রাখা হয়েছে। এরমধ্যে তাল পুলি, কেক, মালপোয়া, তালপোয়া, পাটিসাপটা, তাল মালাই, তালের বড়া, তাল ফোপড়া, তাল ফাঁপা, রকমারি পিঠে, মালপোয়াসহ নানা পদ ছিল। গ্রামের অন্তত ১০ জন নারী তাদের ঘরে তৈরি পিঠা স্কুলে প্রদর্শন করেন।
অন্যদিকে চলে তালগাছ সম্পর্কিত প্রদর্শনী। সেখানে রয়েছে তালপাতা, তালবীজরোপণের ব্যাপারে আলোচনা। সঙ্গে তালের ইতিহাস, বাংলা ছাড়াও দেশের অন্য ভাগে ও বিদেশে তালগাছের নিয়ে নানা অজানা কথা। তালগাছ নিয়ে লেখা গল্প, কবিতা, ছড়া। কীভাবে এতদিন ধরে মানুষের কাজে লেগে এসেছে ওই গাছ, ভবিষ্যতেও জীবন-জীবিকাকে কীভাবে আরও উন্নত করতে পারে তালগাছ, তার ওপর আলোচনা ছিল।
বিএম একাডেমি পরিচালনা পর্যদের সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধবী রায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকমল হোসেন, বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন, কলসকাঠী বিএম একাডেমি প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার পাল, জেলা প্রশাসনের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, বাকেরগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচএম জাফর আহমেদ, কলসকাঠী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক বাবু তরুণ কুমার গাঙ্গুলী, বিলকিস জাহান টেকনিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ এসএম জোবায়ের আলম পারভেজ, জনতা ব্যাংক কলসকাঠির শাখা ব্যবস্থাপক শাহানুর আজিজ, গ্রামীণ ব্যাংক অলংকার শাখা ব্যবস্থাপক ফজলুর রহমান।
আলোচকরা বলেন, ‘আম উৎসব হতে পারে, ইলিশ উৎসব হতে পারে, কেন তাল উৎসব নয়?’
তারা আরও বলেন, ‘শ্রাবণ মাসের শেষ থেকে ভাদ্রের প্রথম ভাগে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে নানা তালের পদ হয়ে থাকে। সময়ের অভাবে সেই রেওয়াজ বন্ধ হওয়ার মুখে। শিশুরাও বোধহয় তাল কুড়িয়ে এখন আর ততটা মজা পায় না। নানা পদও হারাতে বসেছে।
গ্রামের অনামিকা চন্দ্র, অনিমা রানি দাশ বলেন, ‘সেরা পদ বানিয়ে নজর কাড়তে আমরা চেষ্টা করেছি। যাতে করে তালগাছ শুধু আমাদেরকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করবে না, খাদ্যও দেবে সেই তথ্য আমরা জানাতে চেয়েছি। আমরা সুযোগ পেলে তালপাতার সামগ্রী তৈরি শিখতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
এমএস/এএটি