ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম শামাকে স্মরণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম শামাকে স্মরণ শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম শামার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা

ঢাকা: বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আলোচনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ।

এছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভূইয়া, গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কারী শামীম ইমাম, টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, টিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলিফ দেওয়ান, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন, গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আশুলিয়া শাখার সভাপ্রধান বাবুল হোসেন এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।


স্মরণসভায় শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম শামার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রদীপ রায় এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শামার স্ত্রী রুবী আক্তার।

সভার শুরুতে আমিনুল ইসলাম শামার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং আমিনুল ইসলাম শামা এবং শ্রমিক আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

স্মরণসভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকের পশ্চিমা গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক যাত্রায় যা কিছু অর্জন তা এসেছে শ্রমিক আন্দোলনের হাত ধরে। শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, নারীদের ভোটাধিকার, কথা বলার অধিকার বা মত প্রকাশের অধিকার সকল কিছুই শ্রমিক আন্দোলনের ভেতর দিয়েই অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশে আজকে আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি, যে গণতন্ত্রহীনতার মধ্যে আছি সেটার কারণও গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব। ২০১৪ সালে ১৫৩ জন ভোট ছাড়া সংসদে বসে যাওয়া কিংবা ২০১৯ সালে রাতের আঁধারে ভোট করে ক্ষমতায় বসে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলনসহ সকল পেশাজীবী আন্দোলনকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গত ৩ দশকে শ্রমিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে সরকারি দলের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রমিক আন্দোলনে দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন প্রবেশ করিয়ে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ভিডিও বার্তায় বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিক থেকে শ্রমিক নেতৃত্বে উঠে আসা খুব সাধারণ ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের জন্য এটি আরো কঠিন। কিন্তু এটি দরকার, বাংলাদেশের জন্য, শ্রমিক আন্দোলনের জন্য। আমিনুল ইসলাম শামা সেরকমই একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। অনেক নিষ্ঠার সাথে তিনি শ্রমসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। শরীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি এ কাজ ক্লান্তিহীনভাবে করে গেছেন। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন তখন তাকে দেখেছি, তার কাজও দূর থেকে দেখেছি। এ দেশের শ্রমিক আন্দোলন যখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে তখন আমিনুল ইসলাম শামার চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি। তার ভূমিকা, শ্রম, নিষ্ঠা অন্যদের নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে।

গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমিনুল ইসলাম শামা আজ আমাদের মাঝে নেই। ফলে তাকে স্মরণ করতে করতে যেয়ে আমরা অনেক ভালো ভালো কথা বলছি। কিন্তু দোষগুণ মিলেই মানুষ। সীমাবদ্ধতাগুলোকেও সমান গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা দরকার। তাহলেই আজকের শ্রমিক আন্দোলন আরো জোরদারভাবে সামনের দিকে এগোতে পারবে।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, এই অগণতান্ত্রিক ও লুণ্ঠনের শাসনে শ্রমিক আন্দোলন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শ্রমিক আন্দোলনের একটি বড় অংশ মালিক ও রাষ্ট্রের পৃষ্টপোষকতা নিয়ে শ্রমিকদের দিকভ্রান্ত করছে এবং দ্বিধা বিভক্তি ডেকে আনছে। তার বিপরীতে সততা ও স্বচ্ছতার সাথে শ্রমিক আন্দোলনকে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে যারা পরিচালিত করছেন তাদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম শামা অন্যতম। তার কাজ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিক আন্দোলন ঐক্য ও সংগ্রামের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।