ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লালমনিরহাটের ধরলা পাড়ে ফের বন্যা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
লালমনিরহাটের ধরলা পাড়ে ফের বন্যা

লালমনিরহাট: টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের ধরলা পাড়ে চতুর্থবারের মতো আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ধরলার পানি প্রবাহ রেকর্ড করে ৩১ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার যা (স্বাভাবিক ৩১ দশমিক ০৯ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তা ও সানিয়াজান বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ধরলার পানি ক্রমে বৃদ্ধি হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টার পরে কমতে শুরু করে এবং দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোঘলহাট, কুলাঘাট ও বড়বাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এসব পানিবন্দি পরিবারে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। পানিবন্দি এলাকায় আমন ধান ও সবজি ক্ষেত বন্যায় ডুবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। গবাদি পশু পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকা গরু মালিকরা।

সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চর ফলিমারী গ্রামের শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগের বন্যার কষ্ট না ভুলতে ফের বন্যা। পানি আর পানি। ঘরের ভিতর মাচাং বানিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি। পানি কবে নেমে যাবে আল্লায় জানে। ’

বড়বাড়ি ইউনিয়নের ছোট বাসবিড়া গ্রামের আলীমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ধরলার পানি একটু বাড়লে ছোট ও বড় বাসবিড়া গ্রামের তামান (সকল) বাড়ি পানিতে ডুবে যায়। ঘরে পানি তাই রাস্তায় এসে বসে থাকি। কিন্তু বৃষ্টিতে সেখানেও থাকা যায় না। হামার কষ্ট কায়ো দেখে না। ’

এদিকে তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টির পানি ধীরগতিতে নেমে যাওয়ায় লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চালের বেশকিছু এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে তিস্তাপাড়ে নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সিংগিমারী ও পাসাইটারী গ্রাম বিলীনের পর এখন ভাঙনের কবলে পড়েছে চৌরাহা গ্রাম। কয়েক দিনের ব্যবধানে গ্রামটির শতাধিক পরিবার তিস্তার কড়াল গ্রাসে বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

চৌরাহা গ্রামের আবু বক্কর ও শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘চোখের সামনে বসতভিটা তিস্তার পেটে চলে গেছে ভাই। কিছুই করতে পারে নাই। শুধুমাত্র ঘরগুলোর টিন খুলে নিয়ে রাস্তায় রেখেছি। আসবাবপত্র, গাছপালা ও ফসল ভেসে গেছে তিস্তার স্রোতে। হামরা রিলিপ চাই না, নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ চাই। ’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, টানা বৃষ্টি আর উজানে ঢলের কারণে ধরলা নদীর পানি সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে তা কমে গিয়ে দুপুর ১২টায় শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ধরলা পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৩১ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আস্তে আস্তে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।