ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রবীন্দ্রনাথের নাগর নদীর মোহনার বাঁধ অপসারণের দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
রবীন্দ্রনাথের নাগর নদীর মোহনার বাঁধ অপসারণের দাবি নাগর নদীর বাঁধ। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলায় গুড় নদীর অববাহিকায় তেমুখ নওগাঁ এলাকার নাগর নদীর সংযোগ স্থলে বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন আগে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে একদিকে নদীর চলমান প্রবাহ রোধ করা হয়েছে।

অপরদিকে নদীর সৌন্দর্য্য বিনষ্ট করা হয়েছে। বন্ধ হয়েছে এই এলাকার সব নৌ চলাচল। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহলসহ সর্বস্তরের মানুষ।  

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই নদীর পথ দিয়ে তাজপুর ইউনিয়নের শত শত মানুষ নৌকায় করে শিববাড়ি ও নওগাঁ বাজারে যাতায়াত করতেন। কিন্তু বাঁধ দেওয়ার পর থেকে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সম্প্রতি দুটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে।  

তারা আরো জানান, তেমুখ নওগাঁ বাজার সংলগ্ন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত লেখা কবিতা (আমাদের ছোট নদী) অর্থাৎ নাগর নদীর মোহনায় অবৈধভাবে ক্লোজার বাঁধ দেওয়ায় প্রতিবছর আগাম বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় নদীর পারের সহস্রাধিক মানুষের জীবনমান হুমকির মুখে এবং অনেক আবাদী জমির ফসল ডুবে যাচ্ছে। এতে করে এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।  

স্থানীয় মৎস্য চাষি রুস্তম আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছর বন্যায় শতাধিক পুকুর ভেসে যায়। বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৎস্য চাষিরা। এজন্য তারা অবৈধ ক্লোজার বাঁধ দ্রুত অপসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোরের জেলা প্রশাসক ও  সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।  

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য রঞ্জু মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, এবছর অকাল বন্যায় প্রচুর ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিশেষ করে নদীর পাড়ের পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। এবার আশ্রয় কেন্দ্রেও পানি ঢুকে পড়েছিল। এজন্য এসব স্থানে ত্রাণসামগ্রী নৌকায় করে পাঠানো হয়েছে। আবার অনেক পরিবার দুর্দশার মাঝে নিদারুন কষ্টে বাড়িতে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছেন। এ বাঁধ অপসারণ হলে লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন।

শেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফল হাবিব রুবেল বাংলানিউজকে জানান, প্রবাহমান নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের কারণে অকাল বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে। তাছাড়া চলমান নদীতে বাঁধ দেওয়ায় নৌ চলাচল বন্ধ আছে। এ সমস্যা দ্রুত নিরসনে তিনি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করেন।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন বানু বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি সরেজমিনে দেখার পর পরিস্থিতি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

এদিকে বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলা দিয়ে ৫টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আত্রাই, গুরনই, বারনই, নাগর ও গোদাই নদী। সিংড়া দহ থেকে উত্তরে নাগর নদী পশ্চিমে গুড় নদী। গুড় নদী শেরকোল ইউনিয়নের নওগাঁ বাজারে মিলিত হয়েছে। এই মোহনায় নাগর নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। ১৯৯৬ সালে রাতারাতি নদীর মোহনায় বাঁধ দেওয়া হয়।  

অপরদিকে ধাপে ধাপে আত্রাই নদীর নুরপুর, বিজয় নগর ও কালিনগর এলাকায় বাঁধ দেওয়ায় চলনবিলের সিংড়া অংশে অনেকটা পানি শূন্য হয়ে পড়ে। প্রতিবছর বন্যায় আত্রাই নদীর পানি নেমে যেতে না পাড়ায় নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি বছর বন্যায় রূপ নিচ্ছে। ফলে শত শত পুকুর ভেসে যাচ্ছে, ফসলহানি এবং ঘরবাড়ি বিনষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, নাগর নদীর মোহনায় বাঁধ না দিলে বন্যা এমন ভয়াবহ রূপ নিতো না।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ