ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অদম্য মেধাবী সুজন প্রকৌশলী হতে পারবে তো?

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
অদম্য মেধাবী সুজন প্রকৌশলী হতে পারবে তো? বিধবা মায়ের সঙ্গে সুজন/ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাট: অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়াই করে চলা ভুমিহীন বিধবা মায়ের সন্তান সুজন মিয়ার প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রধান বাধা দারিদ্রতা। অদম্য এ মেধাবী স্বপ্ন পূরণের জন্য তাই ছুটছে বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে।

সাড়া মিলবে কি? পূরণ হবে কি সুজনের স্বপ্ন?

অদম্য মেধাবী সুজন মিয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের জামুরটারী গ্রামের মৃত জমশের আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ৭ বছর আগে হোটেল শ্রমিক জমশের আলী পেটের পীড়ায় মারা যান। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী শামছুন নাহার। দুই মেয়ে ও বড় ছেলের বিয়ে হলেও ছোট দুই ছেলের সংসার পরিচালনায় বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে বিধবা এই নারীকে। হোটেল শ্রমিক বড় ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন।  

বাধ্য হয়ে দৈনিক একশ টাকা মজুরি ও দুই বেলা খাবারের বিনিময়ে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন শামছুন নাহার। খাবার হিসেবে পাওয়া এক প্লেট ভাত বাড়িতে নিয়ে এসে দুই ছেলেসহ ভাগ করে খেয়ে নেন। সুজন মিয়া ও সিরাজুল ইসলাম বেশ মেধাবী। পড়াশুনার প্রতি তাদের আগ্রহ প্রবল। অর্থের কারণে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলেও ছেলেদের আগ্রহের কারণে নিজে না খেয়ে তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগান বিধবা শামছুন নাহার।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় বিধবা ভাতা পান শামছুন নাহার। সেই ভাতার টাকায় ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ চালান তিনি। বসতভিটার জমিও নেই তাদের। প্রতিবেশী আত্মীয়ের দেড় শতাংশ জমিতে একটি ঘর নির্মাণ করে ছেলেদের আগলে রাখেন তিনি।  

পিএসসিতে ‘এ’ প্লাস পেয়ে গ্রামবাসীকে হতবাক করে দেয় বিধবা শামছুন নাহারের সন্তান সুজন মিয়া। এরপর ভর্তি হয় সাপ্টিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে পরীক্ষার ফি শতভাগ দিতে ব্যর্থ হলেও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসের সেরা ছাত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে সুজন। এ বিদ্যালয় থেকে সে জেএসসিতে জিপিএ ৪.৮৬ এবং চলতি বছর এসএসসিতে জিপিএ ৪.৫০ অর্জন করে।

নিজেকে প্রকৌশলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সুজন পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে ভর্তির আবেদন করে। এরপর রংপুর পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে ইলেক্ট্রো মেডিসিন টেকনোলজি ট্রেডে ভর্তির অনুমোদন লাভ করে। স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পেয়েও খুশি হতে পারেনি সুজন। ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তির টাকা এবং রংপুরে থেকে লেখাপড়ার খরচ যোগানোর দুশ্চিন্তা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।  

ভর্তি ফি, থাকা, খাওয়া ও বই মিলে এখন সুজনের প্রয়োজন ১০/১২ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতি সেমিস্টার ফি যোগানো তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। মা শামছুন নাহার বিধবা ভাতা পান প্রতি তিন মাস পরে, মাত্র এক হাজার ৫শ টাকা। সে টাকায় তো পলিটেকনিকে পড়ানো সম্ভব নয়। মাঝ পথে স্বপ্নকে বিসর্জন না দিতে বাধ্য হয়ে সমাজের বিত্তবানদের দুয়ারে ঘুরছে অদম্য মেধাবী এই তরুণ।

স্বপ্ন পূরণের পথে নানাবিধ সমস্যা নিয়ে সুজন মিয়া বলে, ‘টাকার অভাবে অনেকবার লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কিন্তু দারিদ্রতা আটকাতে পারেনি। মায়ের বিধবা ভাতার অর্থে ফরম পূরণ করেছি। বিদ্যালয়ের কোনো পরীক্ষায় শতভাগ পরীক্ষার ফি দিতে পারিনি। রেজাল্ট ভালো করায় শিক্ষকরা সহায়তা করতেন। তাদের এবং গ্রামের বিত্তবানদের সহায়তায় আজ স্বপ্ন পূরণের মধ্য পথে পৌঁছেছি। বাকিটা পথ পাড়ি দিয়ে অর্থাৎ প্রকৌশলী হয়ে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে চাই। ’ 

প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ঋণ নিতেও আপত্তি নেই সুজনের, ‘স্টেশনে চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। আমি হোটেল শ্রমিকের ছেলে প্রকৌশলী হতে পারবো না কেন?  কেউ যদি ঋণ দিয়ে সহায়তা করে লেখাপড়া শেষ করে তা পরিশোধ করবো, এমন ঋণও খুঁজেছি। ' 

স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চায় অদম্য মেধাবী সুজন মিয়া (মোবাইল-০১৩১৯১৮৭৭৬৮)।

সুজনের বিধবা মা শামছুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, ‘গেরামের সগায় কয় (গ্রামের সবাই বলে) ওর বেলে লেখাপড়ায় মাথা (মেধা) ভালো। গরিবের জন্যে কি লেখাপড়া? হামার সুজন ইজিনিয়া (ইঞ্জিনিয়ার) হবার চায়। হামরা গরিব মানুষ এত টাকা কোনটে পাই? কায় দেবে এত টাকা?’ ইজিনিয়ার হইতে কত টাকা নাগে বাহে?’

সাপ্টিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মো. তায়েজ উদ্দিন তাজু বাংলানিউজকে বলেন, সুজন মেধাবী ও জেদি স্বভাবের ছেলে। ভালো রেজাল্ট করায় তাকে আর্থিক সহায়তা করা হয় বিদ্যালয় থেকে। আর্থিক সহযোগিতা পেলে সুজন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।