ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাতক্ষীরার উন্নয়নে ২১ দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
সাতক্ষীরার উন্নয়নে ২১ দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি পেশ। ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে বেড়িবাঁধ ভাঙন ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার দাবিতে ১০ হাজার ৮৮৭ জনের গণস্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দুই ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের মাধ্যমে নাগরিক নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ স্মারকলিপি পেশ করেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিম।

এতে বক্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এখনো অনেক স্থানে মানুষের বাড়ি ঘর রাস্তা-ঘাটে জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হচ্ছে। হাঁটু পানি-কোমর পানিতে বসবাস করছে সাতক্ষীরা শহরের বদ্দিপুর, ইটাগাছা, কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কিন্তু সমস্যা সমাধানে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তেমন কোনো কাজে আসছে না।

বক্তারা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, উজানের নদ-নদীগুলোর সঙ্গে এখানকার নদ-নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যত্রতত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন, অপরিকল্পিত মাছের ঘের নির্মাণের কারণে এবং পোল্ডারের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের খালগুলো লিজ দেওয়া ও বেদখল হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা এখন দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের ভাটিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও আশাশুনির দক্ষিণাংশ এবং খুলনার কয়রা উপজেলা ও পাইকগাছার দক্ষিণাংশের বেড়িবাঁধ প্রতিবছর ভাঙছে। আবার কপোতাক্ষের উজানে পাইকগাছা ও আশাশুনির উত্তরাংশ তালা, কলারোয়া, কেশবপুর, মণিরামপুরসহ উজানের অংশে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। একই অবস্থা খোলপেটুয়াসহ অন্যান্য নদীগুলোর। প্রতিবছরই নদী ভরাট প্রক্রিয়া ভাটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর সেই নদী ভরাটের কেন্দ্রস্থলের আশপাশেই সবচেয়ে বেশি ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে কপোতাক্ষ নদ খননে ৫৩১ কোটি টাকার দ্বিতীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বক্তারা বলেন, একটি পোল্ডার বা একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রকল্প তৈরি করে ভাঙন বা জলাবদ্ধতা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এজন্য উপকূলীয় এলাকা তথা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা নিয়ে সমীক্ষার পর একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিকী, আনোয়ার জাহিদ তপন, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, অ্যাড. আল মাহামুদ পলাশ, আবুল হোসেন, নিত্যানন্দ সরকার, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, মাধব চন্দ্র দত্ত, অপারেশ পাল, শফিকুল ইসলাম, অ্যাড. কাজী আব্দুল্লাহ আল হাবিব, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মুনসুর রহমান, ইয়ার আলী, আব্দুস সাত্তার, কায়সারুজ্জামান হিমেল, করসার আলী, আব্দুস সামাদ, মমিন হাওলাদার, পরিতোষ বৈদ্দ, আবিদুর রহমান, পিন্টু বাউয়ালিয়া, লুৎফর রহমান, ডা. শহিদুল ইসলাম, মনোরঞ্জন ব্যনার্জি, মিজানুর রহমান, মীর জিল্লুর রহমান, আলী নুর খান বাবলু প্রমুখ।

অবস্থান কর্মসূচির পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা, এই এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন, দুর্যোগের কারণে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙনকবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ, এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে জলাবদ্ধতার হাত থেকে সাতক্ষীরা শহর বাঁচাতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, জেলার সব নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ যতদূর সম্ভব আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সব বাধা অপসারণ, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, উদ্ধারকৃত জমি ইজারা দেওয়া বন্ধ, নতুন করে অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ বন্ধ, গ্রাম-শহরের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন স্থানে চিংড়ি চাষ বন্ধ, ইছামতি নদীর সঙ্গে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগ স্থাপনকারী কুলিয়ার লাবণ্যবতি ও পারুলিয়ার সাপমারা খালের দু’পাশের স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালু, ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করা, নিচু বিলগুলো উঁচু করতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ, সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ চালু ও বেতনা ও মরিচ্চাপের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং নদী খালের নেট-পাটা অপসারণ করার দাবিসহ সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে ২১ দফা দাবি জানানো হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।