ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জামিনে মুক্ত হলেন রূপপুর বালিশকাণ্ডের আলোচিত ঠিকাদার শাহাদত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২০
জামিনে মুক্ত হলেন রূপপুর বালিশকাণ্ডের আলোচিত ঠিকাদার শাহাদত শাহাদত হোসেন

পাবনা: পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রীন সিটির আসবাবপত্র সরবরাহের বহুল আলোচিত ঠিকাদার শাহাদত হোসেন কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।  

সোমবার (৩১ আগস্ট) সকালে জামিন আদেশের পর বিকেলেই তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।

ঠিকাদার শাহাদত হোসেন সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর পাবনায় দায়েরকৃত দুদকের দুই মামলায় ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে ৮ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার বালিশকাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদার শাহাদত হোসেনের জামিন ও মুক্তি হলেও খবরটি স্থানীয় সাংবাদিকরা জানতে পারেননি। তবে সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জামিনের কাগজপত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেগুলো এখনো হাতে আসেনি। আজই হয়তো পেয়ে যাবো। জামিনের কাগজপত্র পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের আইনজীবী ওবাইদুল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ মকবুল আহসানের আদালতে আসামিপক্ষ জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালতে জামিন মঞ্জুর হওয়ার পরপরই আমরা সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করেছি। কপি পেলে দুদক ঢাকা কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেই মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আদালতের একটি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার আদালতে জামিন আবেদন করলে নথি যাচাই-বাছাই শেষে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ মকবুল আহসানের আদালত ঠিকাদার শাহাদত হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় দুদকের আইনজীবী ওবাইদুল হক ও আব্দুল জাহিদ রানা এবং আসামিপক্ষে আইনজীবী হিসেবে সনৎ কুমার সরকার ও সাহাবুদ্দিন সবুজ উপস্থিত ছিলেন।

দুদকের দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রীন সিটির দুইটি ভবনের জন্য আসবাবপত্র সরবরাহের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শাহাদত হোসেন একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখান ছয় হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে বালিশের দাম পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং প্রতি বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ দেখান ৭৬০ টাকা। অস্বাভাবিক দামে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগে ৩১ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে দুইটি মামলায় আসামি হলেন শাহাদত হোসেন। মামলা দায়েরের পরপরই শাহাদত হোসেনসহ ১৩ জন আসামিকে ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেফতার করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।  
মামলাগুলোর বাদী দুদকের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন ও উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান মিরাজ।

দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে জামিন আদেশের পর ওই দিন বিকেলেই তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান। গত বছরে আটক হওয়ার পর থেকেই ঠিকাদার শাহাদত হোসেন কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে আসামিরা হাইকোর্টসহ আদালতে জামিন আবেদন করলেও আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।  

তিনি আরো জানান, মামলাগুলোর এখনো অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। জামিনের কাগজপত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে, কাগজপত্র এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছেনি। জামিনের কাগজপত্র পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, বালিশকাণ্ডের অন্যতম ঠিকাদার শাহাদত হোসেন পাবনা পৌর এলাকায় রাধানগর মহল্লায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তার বাড়িতে হেলিকপ্টার নামার হেলিপ্যাডও রয়েছে। মামলার আগে বেশ কয়েকবার তিনি ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে হেলিকপ্টারে করে যাতায়াত করেছেন। ঠিকাদার শাহাদত তৎকালীন বিএনপি জামায়াত শাসন আমলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে। তার বড় ভাই আব্দুল হালিম সাজ্জাত পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন এবং গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচনের জন্য গণসংযোগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।