ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২০
টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত প্লাবিত এলাকা। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: বাগেরহাটে চার দিনের টানা বৃষ্টির সঙ্গে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুধু নিম্নাঞ্চল নয় বাগেরহাট জেলা শহরের প্রধান বাজার, মোরেলগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও সড়ক জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে।

ভেসে গেছে কয়েক হাজার মৎস্য ঘেরের মাছ। নষ্ট হয়েছে চাষিদের সবজি ক্ষেত। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৎস্য ও সবজি চাষিরা। অনেকের বাড়ি ঘরেও পানি উঠে গেছে। রান্নাও বন্ধ রয়েছে কারো কারো। তবে সবজি ও মৎস্য খাতে সঠিক কি পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেননি মৎস্য ও কৃষি বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার রামপাল, কচুয়া, চিতলমারী, মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও মোরেলগঞ্জ এলাকায় বিপুল পরিমাণ মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। মাঠের ঘেরগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে একটি ঘেরে পরিণত হয়েছে। মাঠ থেকে পানির সঙ্গে মাছও যাচ্ছে নদী ও খালে। এতে চাষিদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর ফুলহাতা গ্রামের আল আমিন, আব্দুল হালিম ফকির, রাকিবসহ মাছ চাষি বলেন, গত তিনদিন ধরেই অবিরাম বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের ঘেরগুলো তলিয়ে গেছে। এই গ্রামের শতাধিক মানুষের ঘের তলিয়ে গেছে। আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।

ঘষিয়াখালী গ্রামের কায়কোবাদ মৃধা বলেন, ২২ বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে মাছ চাষ করেছিলাম। পানিতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। কীভাবে দেনা শোধ করব জানিনা।

বহরবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর (উত্তর ফুলহাতা) ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফরিদ ফকির বলেন, টানা বৃষ্টির সঙ্গে কেওড়া ও পানগুছি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বহরবুনিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৬ থেকে ৭শ ঘের ডুবে গেছে। এতে আমাদের চাষিদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার ওয়ার্ডের অনেকের বাড়ি ঘরও তলিয়ে গেছে। রান্নাও বন্ধ রয়েছে বেশকিছু মানুষের। মূলত নদীবেষ্টিত এই ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় যেকোনো দুর্যোগে আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ইউনুস শেখ বলেন, পোনা ছাড়ার কিছুদিন পরেই আম্পানের আঘাতে পানিতে তলিয়ে যায় আমাদের ঘের। ভেসে যায় মাছ। আম্পানের পরে আবার নতুন করে শুরু করেছিলাম সব কিছু। যখন মাছ বিক্রি করব তখনই টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আবারও ভেসে গেল আমাদের স্বপ্ন। কী করব জানি না।

চিতলমারী এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, পানিতে মাছ তো গেছেই। বিভিন্ন সবজি গাছও মরে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে গাছের গোরায় পানি জমে শিকর পচে গেছে প্রায়। এখন রোদ উঠলেই মারা যাবে গাছগুলো।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদী ও সাগরে জাল ফেলতে না পেরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবনে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার জেলে। কেউ কেউ আবার শরণখোলায় নিজ উপজেলায়ও ফিরে এসেছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, সমুদ্রে ঝড় হলে জেলেরা সাধারণত বনের খালে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অনেক জেলে আবার লোকালয়েও আশ্রয় নিয়েছে। কোনো জেলে যদি সমুদ্রে সমস্যায় থাকে তাহলে তাদের আশ্রয় ও উদ্ধারের জন্য বন বিভাগ চেষ্টা করবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক রঘু নাথ কর বলেন, সবজি মৌসুমের এখন প্রায় শেষ সময়। বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এভাবে যদি আরও দুই একদিন বৃষ্টি হতে থাকে তাহলে সবজির বেশ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমরা খবর পেয়েছি অবিরাম বৃষ্টি ও বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাগেরহাটের কোথাও কোথাও চিংড়ি ঘের ডুবে গেছে। আমরা জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পেলে জানানো যাবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।