ঢাকা: একটু বৃষ্টি নামলেই হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের বসতঘরে পানি পড়তো। সেই বৃষ্টি পানিতে তার ঘরের সবকিছু ভিজে একাকার হতো।
এতদিনের কষ্টের জীবন শেষে জরাজীর্ণ মাটির ঘর ছেড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সেই ‘দাতা ভিক্ষুক’ রোববার (১৬ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আধুনিক পাকা ঘরে উঠবেন। নতুন পাকা ঘরের চাবিও তুলে দেওয়া হবে তার হাতে।
সরকারের ত্রাণ তহবিলে হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের দানের খবরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে তিনি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের উদারতায় খুশি হয়ে নিজের তহবিল থেকে উপহার হিসেবে জমি, পাকা ঘর এবং দোকান করে দেওয়া ব্যবস্থা করেন।
নাজিম উদ্দিন যে ঘরটিতে এতদিন ছিলেন, সেটি মূলত সরকারের খাস জমি ছিল। বিষয়টি এতদিন ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনও জানতেন না। সরকারের এই খাস জমিও তার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দিন যে ঘরে থাকতেন সেই জমি কিছুটা সম্প্রসারণ করে ১৫ শতাংশ জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
নাজিম উদ্দিনকে যাতে আর কখনো ভিক্ষা করতে না হয়, সেজন্য তাকে একটি দোকানও করে দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসাও করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উপহার পেয়ে খুশি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন। নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘর রেডি হইছে। কাল নতুন ঘরে উঠবো, ডিসি সাব আইবো। ঘর পছন্দ হয়েছে। খুশি হইছি দেইখা। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে তিনি বলেন, ‘এ রকম প্রধানমন্ত্রী আমার ৮২ বছর বয়সে আর কহনো দেহি নাইকা। মনে করুন আমি তো করোনার জন্য ট্যাহাডা দিছি। সেখানে খুশি হইয়া প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে উপহার দিছেন, খুব আমি খুশি হইছি। ঘরবাড়ি সব দিল। আমি আর কোনো কিছু চাই না। ’
‘আমি দোয়া করি আল্লাহ তারে (প্রধানমন্ত্রী) দীর্ঘদিন বাঁচায়ে রাখুক। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আল্লাহ তারে আজত্ব (দেশ শাসন) করার সুযোগ দিক। ’
নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে দেখার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
শেরপুর জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে ওনাকে (ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন) একটা বাড়ি উপহার দিয়েছেন। বাসার চাবি আমরা হস্তান্তর করবো রোববার। ওনাকে আমরা নতুন পাকা ঘরে তুলে দেবো। ’
ভিক্ষুক হয়েও কষ্টের জমানো টাকা দান করে দিয়ে নজির স্থাপন করায় বিভিন্ন সময় নাজিম উদ্দিনের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন) সারা বিশ্বে মহৎ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। এত বড় মানবিক গুণ, অনেক বিত্তশালীর মধ্যেও দেখা যায় না। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
মুজিব বর্ষের মধ্যে সবার জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার।
মুজিববর্ষের মধ্যে সবার ঘর নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে এটি হতে পারে না। আমরা বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা পূরণ করতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
এমইউএম/এএটি