ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলানিউজকে আবদুল গাফফার চৌধুরী

’৭৩-এর ন্যাম সম্মেলনে প্রমাণ হয় বঙ্গবন্ধু বড় নেতা

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
’৭৩-এর ন্যাম সম্মেলনে প্রমাণ হয় বঙ্গবন্ধু বড় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ঢাকা: ১৯৭৩ সালের ৫ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন। যাতে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বনেতাদের নজর কাড়েন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এ সম্মেলনটি ছিল নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সম্মেলন শেষে ঘোষণাপত্রে জোটনিরপেক্ষ দেশগুলো তাদের সমর্থন দেয় বাংলাদেশকে।

১৯৭৩ সালের সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অমর একুশের ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী। বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী আবদুল গাফফার চৌধুরী গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসে বাংলানিউজের কাছে সেই সম্মেলনের স্মৃতিচারণ করেন।

বাংলানিউজ: আপনি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজেরিয়ায় জোট নিরপেক্ষ (ন্যাম) সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
আবদুল গাফফার চৌধুরী: ব্যক্তিগতভাবে আমার ভয় ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। কারণ, ওটা অনেক বড় সম্মেলন ছিল। সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মিশরের আনোয়ার সাদাত, সৌদি আরবের কিং ফয়সাল, লিবিয়ার গাদ্দাফি, কিউবার ফিদেল কাস্ট্রোর মতো বড় বড় বিশ্ব নেতারা। সবমিলিয়ে ৭৩ দেশের প্রতিনিধি এসেছিলেন।

বাংলানিউজ: এটাই কি আপনার ভয়ের কারণ ছিল?
আবদুল গাফফার চৌধুরী: সেটাই। কারণ, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল না। তখন মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কথা বলতে পারবেন কি-না সে বিষয়ে আমার মূল সন্দেহ ছিল। কিন্তু সেই সন্দেহ তিনি কাটিয়ে এসেছিলেন। এটাই তার বড় বিশেষত্ব। এবং বঙ্গবন্ধু যে বড় লিডার, সেটা ওই সম্মেলনেই প্রমাণ হয়ে যায়।

.

বাংলানিউজ: বঙ্গবন্ধু তো তার ভাষণে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কেমন ছিল সে সময়কার পরিস্থিতি?
আবদুল গাফফার চৌধুরী: ওই সম্মেলনে প্রথম বর্ণানুক্রমিকভাবে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। সে হিসেবে কথা বলার ছিলো আফগানিস্তানের প্রতিনিধির। কিন্তু তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনতে চাই। এরপর বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করেন। যা শুনে ফিদেল কাস্ট্রো ছুটে এসে বঙ্গবন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন তার অমর বাণী, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, আপনাকে দেখেছি। আমার আর হিমালয় দেখার দরকার নেই। ’ সৌদি আরবের কিং ফয়সাল যিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে এসে বারবার বলেন, ‘আমি লজ্জিত, আমি লজ্জিত’।

বাংলানিউজ: আর কোন স্মৃতি?
আবদুল গাফফার চৌধুরী: ওই সম্মেলনে একবার গণ্ডগোল লেগে যায়। আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলায় তিউনিয়াশার হাবিব বুর্গিবা রেগে যান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ ঠিক আছে। কিন্তু আমেরিকাও একটা পক্ষ। ’ এ নিয়ে তো বিশাল হট্টগোল। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষ নই। একটা পক্ষ। সেটা হলো আমরা সব সর্বহারার দল। ’ এরপর সবাই হাততালি দিয়ে তাকে সমর্থন দেন।

বাংলানিউজ: সম্মেলন কক্ষের বাইরের কোন স্মৃতি কি আপনার মনে আছে?
আবদুল গাফফার চৌধুরী: তুমি বোধহয় জানো আলজেরিয়ায় একটি বিখ্যাত মসজিদ আছে, গ্র্যান্ড মসজিদ। সেখানে আনোয়ার সাদাত, কিং ফয়সলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুও দলবেঁধে নামাজ পড়তে যেতেন। আর কোন মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক যেতেন না। এটি জানতে পেরে আলজেরিয়ার এক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি তো সেক্যুলার, তাহলে নামাজ পড়েন কেন?’ এর জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ইন মাই পারসোনাল লাইফ, আই এম এ ট্রু মুসলিম। বাট ইন মাই পলিটিক্যাল লাইফ, আই এম সেক্যুলার। ’ বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্য সে সময় আলজেরিয়ায় আলোড়ন তোলে।

বাংলানিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুল গাফফার চৌধুরী: ধন্যবাদ।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।