ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু হত্যা: ষড়যন্ত্রকারী নির্দেশদাতাদের বিচার জরুরি

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
বঙ্গবন্ধু হত্যা: ষড়যন্ত্রকারী নির্দেশদাতাদের বিচার জরুরি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের তদন্ত এবং জড়িতদের বিচারের দাবি জোরালো হচ্ছে। এর জন্য স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে।

ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটা করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। এর মধ্যে ৬ জনের মুত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বাকি ৬ জনের ৫ জন এখনও পলাতক। ২০০২ সালে মারা গেছেন এক জন।  

১৮৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করলে বিচার কাজ ঝুলে যায়। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে ৫ জনের এবং চলতি বছর এক জনের ফাঁসি কার্যকর হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে যাদের সাজা হয়েছে, তারা ছিলেন আত্মস্বীকৃত খুনী। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিলো, কারা ষড়যন্ত্র করেছিলো সে বিষয়ে তদন্ত কিংবা বিচার এখনও হয়নি।  

এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত ও বিচার জরুরি বলে স্বাধীনতার সপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি করে আসছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও এ দাবি রয়েছে।

এসব দলের নেতারা বলছেন, সামরিক বাহিনীর কিছু অফিসার ও সৈনিকের দ্বারাই শুধু এই ন্যক্কারজনক ও দুঃসাহসিক হত্যাকাণ্ড সম্ভব ছিল না। এর পেছনে অনেক বড় ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে অর্থাৎ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তদন্ত ও বিচার হওয়া জরুরি।  

এদিকে তদন্তের পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার বাংলাদেশ করতে না পারলে আন্তর্জাতিকভাবে বিচার চাওয়া যেতে পারে বলেও তারা মনে করেন। দেরিতে হলেও এখনই সঠিক তদন্ত প্রয়োজন। এজন্য একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।  

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বাংলানিউজকে বলেন, সঠিক তদন্ত হলে এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র কারা করেছিলো তা জানা যাবে। দেশবাসীর জানা দরকার, এ জন তদন্ত হওয়া উচিত। এই ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলো আমরা বলে আসছি। কিন্তু কেউ কেউ মনে করতে পারে, রাজনৈতিক কারণে হয় তো এটা বলা হয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় তাহলে স্বাগত জানাবো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে প্রথমেই বলেছিলাম একটা কমিশন গঠন করে তদন্ত করতে হবে। যে সব ব্যক্তি ও দেশ এই ঘটনায় জড়িত ছিলো তা বেরিয়ে আসা দরকার। এটা দ্রুত করা উচিত, কারণ এখনও সাক্ষী পাওয়া যাবে, অনেকেই বেঁচে আছেন। সিআইএ, র, আইএসআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত করা যেতে পারে। কোনো দেশ বা ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের বিচার চাওয়া যেতে পারে। ষড়যন্ত্রের মূল নায়কদের সম্পর্কে জাতি ও বিশ্ববাসী জানতে পারবে। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এটা জরুরি।  

১৪ দলের অন্যতম নেতা এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত ছিলো, সেটা চিহ্নিত করা দরকার। এগুলো তদন্তের জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠন করা দরকার। বিচার কত দিনে হবে সেটা পরের প্রশ্ন। তদন্ত হলে সত্য বেরিয়ে আসবে। এতে সব বিতর্কের অবসান হবে এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন থাকা যাবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে জন্য তদন্ত ও বিচার হওয়া জরুরি।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২০
এসকে/এজে
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।