ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছেলেদের জমানো টাকা লুট করতেই মাকে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
ছেলেদের জমানো টাকা লুট করতেই মাকে হত্যা হত্যাকারীরা। ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: ছেলেদের জমাকৃত টাকা লুট করতেই খুন করা হয় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মোল্লাটিল্লা এলাকার বাসিন্দা জুলেখা বেগমকে (৪৫)।
 
হত্যার পর মরদেহ পুঁতে ফেলা হয় বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরের একটি খোলা রিং ল্যাট্রিনে।

আর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে খুনিরা পেয়েছিল মাত্র ৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। লুণ্ঠিত টাকার কিছু অংশও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
 
শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী দ্বিতীয় আদালতে রোমহর্ষক হত্যার বর্ণনা দেয় খুনের দায়ে গ্রেফতারকৃত তিন আসামি। আদালতের বিচারক মাহবুবুর রহমান জবানবন্দি রেকর্ড করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) খালেদ চৌধুরী রানা বাংলানিউজকে বলেন, তিন আসামি নিজেদের জড়িয়ে আদালতে জুলেখা হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। মূলত; তারা টাকার জন্যই তাকে হত্যা করে। হত্যার পর ৪ হাজার ৮৪৮ টাকা পেয়েছিল তারা। এরপর গুম করতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে খোলা রিং লেট্রিনে মরদেহ পুঁতে ফেলে।
 
গত বুধবার (১২ আগস্ট) রাত ১১টায় ওই নারীর মরদেহ ফেঞ্চুগঞ্জের মোল্লাটিল্লা এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। খুনের আলামত বলতে ছিল মরদেহ উদ্ধারস্থলের পাশে তাজা রক্তের ছোপ। সেই আলামাতকে পুঁজি করে খুনির ঘরে পৌঁছায় পুলিশ।
 
তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক খালেদ চৌধুরী বলেন, বুধবার দিনগত রাত প্রায় ১১টায় অফিসে বসে একটা শিশু হত্যা মামলার কাজ শেষে কম্পিউটারে দ্রুত প্রিন্ট দিচ্ছি। আগের রাতে চোর ধরতে গিয়ে একফোঁটা ঘুম হয়নি। শরীর খারাপ লাগছে, কাজ শেষে ঘুমাতে যাবো, এমন সময় কক্ষের সামনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে তাকে বললেন, খালেদ আসেন তো ভাই, একজন নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে, চলেন যাই। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি নারীর পা দেখা যাচ্ছে খোলা রিং টয়লেটের ট্যাংকির ভেতরে। পাশেই ঘাসের উপর হালকা তাজা রক্তের ছোপ। চিন্তায় পড়ে গেলাম এ রক্ত কার? ভিকটিমের, নাকি তাকে হত্যাকারী নরপশুর।
 
তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান এবং উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে চারপাশ ঘুরে দেখি। তাদের দু’জনকে মরদেহের ব্যবস্থাপনায় রেখে আলামত সংগ্রহের জন্য সিআইডি টিমকে সংবাদ দিতে অনুরোধ জানাই। দেরি হলে হত্যাকারীরা হয়ত অনেক দূরে চলে যাবে। অন্যদিকে মা হারা দুই সন্তানের কান্না সহ্য হচ্ছিল না। এসআই আখতারুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই নেমে পড়ি  অভিযানে। প্রত্যেকটি তথ্য যাচাই করে লক্ষ্য ছিল একটাই হত্যাকারীদের থেকে যেনো তিনি এগিয়ে থাকেন। সূযের্র আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে হয়ত হত্যাকারীরা আলোর সঙ্গে মিশে যাবে, আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
 
তিনি আরো বলেন, দিনের আলোর সুখ আমি তাদের নিতে দেব না এই পণ থেকে রাতভর অভিযান চালালাম। কখনও বস্তি, কখনও চা বাগানের উঁচু টিলা, সিএনজি অটোরিকশা, কখনও মোটরসাইকেল, কখনও পুলিশ ভ্যানে। রাত ৩টার পর থেকে সুফল আসতে শুরু করল।
 
মামলার আদ্যপান্ত ইতোমধ্যে ছবি আঁকা হয়ে গেছে। গ্রেফতার করা হলো মাস্টার প্ল্যানার অত্যন্ত ধূর্ত কালুকে (২০)। সে পাশের ঘরের গরুর রাখাল। তার সঙ্গেই মা হারা সন্তানটি প্রতিরাতে একই বিছানায় ঘুমাতে যেতো। আর শুয়ে শুয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো শেয়ার করেছিল, কিভাবে মায়ের কাছে টাকা জমাচ্ছে। খুনির ভাবনায় ছিল টাকা লাখ দেড়েক হবে। এরপর চা বাগানের গভীর থেকে গ্রেফতার করা হয় আরেক চতুর খুনি নিদ্রাকে (২১)। তাদের স্বীকারোক্তিমতে জড়িত অপর আসামিকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় লুণ্ঠিত টাকার কিছু অংশ।
 
ওসি (তদন্ত) খালেদ বলেন, জুলেখা বেগমের দুই ছেলে ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। অর্জিত টাকায় দুই সন্তানকে একটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তাদের মায়ের। ঘরে একা থাকা তাদের মা জুলেখা বেগমকে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সামান্য টাকার লোভে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরুধ করে হত্যা করে। হত্যার পর মরদেহ গুম করতে খোলা টয়লেটের রিং ট্যাংকিতে ফেলে দেয়। তারা ভেবেছিল এ মরদেহ কখনও দেখা যাবে না। কিন্তু সামান্য কাঁচের টুকরো এ অত্যাচার মেনে নিতে পারেনি। খুনির পা কেটে দিল। সবুজ ঘাসে লেগেছিল আলামত রক্তের ছোপ। যা থেকে হত্যাকারীদের ধরতে সক্ষম হয়েছি।
 
এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে রোমন আহমদ তিন জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।