ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই ছিল শাকিলের মূল টার্গেট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই ছিল শাকিলের মূল টার্গেট

বগুড়া: চাকরি ও ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও ১২শ’ কোটি টাকার চেকসহ গ্রেফতার ডিজে শাকিলসহ তার দুই সহযোগীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। কথায় আশস্ত ও বিশ্বস্থতা অর্জনই ছিলো শাকিলের মূল টার্গেট।

এরপর মানুষের সঙ্গে চালিয়ে যেতেন প্রতারণা।

ডিজে শাকিল সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া রিশান গ্রুপ অব কোম্পানি ও রিশান নিউজ এজেন্সি রয়েছে শাকিলের। এ প্রতিষ্ঠান দু’টির চেয়ারম্যান শাকিল নিজেই।

গ্রেফতার শাকিলসহ তার দুই সহযোগীকে গত বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে আদালতে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে শাকিলকে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি পদে থেকে ডিজে শাকিল খুব অল্প দিনেই প্রচুর টাকার মালিক বনে গেছেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার প্রতারণার শিকার বগুড়ার দুই ভুক্তভোগী বিষয়টি নিয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করলে বুধবার (১২ আগস্ট) বিকেলে তাড়াশ থেকে তার দুই সহযোগীসহ শাকিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ সময় তারাশ উপজেলা পরিষদ এলাকায় ডিজে শাকিলের রিশান গ্রুপের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১২শ’ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকার চেক এবং সরকারি-বেসরকারি দফতরের ভুয়া নিয়োগপত্র, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের জাল নথি, ভুয়া চেক বই, সিল, নকল নিয়োগপত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

এছাড়া এ প্রতারক চক্রের ১২টি ফেসবুক আইডি, ৩৫টি ফেসবুক পেজ ও ভুয়া সাংবাদিকতার আইডি কার্ড এবং সাতটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।  

বগুড়া ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছলাম আলী বাংলানিউজকে জানান, গত বুধবার (১২ আগস্ট) বিকেলে তাড়াশ উপজেলা পরিষদ গেট সংলগ্ন রিশান গ্রুপের প্রধান কার্যালয় থেকে ডিজে শাকিলসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের এ দলটি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া অনলাইন পেজ চালিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ও লোন সার্ভিস নামে একটি অনলাইন পেজে দেশে-বিদেশে লোন করে দেওয়ার ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচার করে তারা। বিজ্ঞাপন দেখে বগুড়ার সদর উপজেলার মালতিনগর এলাকার বাসিন্দা ও আমায়রা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আমানতউল্লাহ তারেক ও অভি এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. আশিক দৌলতানা নামের দুই উদ্যোক্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য ওই প্রতারক চক্রের শাকিলের সঙ্গে কথা বলেন। কথাবার্তায় শাকিল লোনের পাঁচ শতাংশ কমিশন হিসেবে দাবি করেন এবং লোন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাদের কাছ  থেকে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নেন ডিজে শাকিল। এরপর তাদের বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাড়ে চার কোটি টাকার দু’টি চেক দেন। ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর তারা জানতে পারেন চেকগুলো ভুয়া এবং তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বাংলানিউজকে জানান, যেকোন অপরাধ দমনে জেলা পুলিশ সদা তৎপর রয়েছে। বগুড়ার এক ব্যবসায়ীর মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাকিলসহ তিন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে।

জানা গেছে, শাকিলের বাবা মো. কাজী গোলাম মোস্তফা তারাশ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি। শাকিলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার মাত্র সাত বছর। অল্প সময়ে রাজনীতিতে আসা শাকিল মানুষকে সরকারি বিভিন্ন নথিপত্র দেখিয়ে বিশ্বস্থতা অর্জন করে চালিয়ে যেতেন প্রতারণা। তিনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও সাংবাদিক পরিচয়ে নিজ এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দাপটে চলতেন।

তারাশ পৌর এলাকার খা পাড়ায় শাকিলের শ্বশুরবাড়ি এলাকায় তার একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মহলের (রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক) ব্যক্তিদের পেছনে টাকা খরচ করতেন এবং তাদের পরিচয়ে বিভিন্ন সুবিধা নিতেন। শাকিল ঢাকায় ডিজে পার্টিতে সহযোগী হিসেবে থাকতে থাকতে ডিজে শাকিল হিসেবে পরিচিতিও পান।

স্থানীয়রা জানান, শাকিল তার স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বাড়ি, গাড়ি কিনতে টাকা দিয়ে সহয়তা করতেন। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন অফিসে এসি-ফ্যান কিনে দিতেন। এসব অফিসের কর্মকর্তাদের খুশি করতে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিকনিকের আয়োজন করতেন শাকিল। এসবের বিনিময়ে ওই ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে সুবিধা নিতেন তিনি। এসব সুবিধা নিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই ছিল শাকিলের মূল টার্গেট বলেও জানান স্থানীয় লোকজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
কেইউএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।