ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইউআইটিএসের কাছে চাঁদা দাবি, ৭ মাসেও হয়নি মামলার চার্জশিট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
ইউআইটিএসের কাছে চাঁদা দাবি, ৭ মাসেও হয়নি মামলার চার্জশিট শওকত হাসান মিয়া

ঢাকা: রাজধানীর বারিধারায় জামালপুর টুইন টাওয়ারের মালিক শওকত হাসান মিয়া সুবিধামতো নিজের ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় দেন। কখনো নিজেকে মেজর আবার কখনো বঙ্গলীগ সভাপতি দাবি করা শওকতের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ।

এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও।

ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (ইউআইটিএস) উপাচার্যের কাছে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি এবং প্রাণনাশের হমকির অভিযোগও রয়েছে শওকত হাসানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ইউআইটিএসের উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল।

মামলার তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। তবে কোন এক অদৃশ্য কারণে সাত মাসেও চার্জশিট জমা দেয়নি ভাটারা থানা।

জানা গেছে, মামলা দায়েরের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে লাপাত্তা হন শওকত হাসান। আদালত নির্ধারিত ৬ সপ্তাহের জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ৫ মাস পর গত ২৭ জুলাই নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন শওকত। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া জানান, চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী স্থানীয় দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য সাক্ষী ও ভুক্তভোগী ইউআইটিএসের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মানের ঘটনা সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অথচ সাত মাসেও মামলার চার্জশিট হয়নি, পুলিশ মামলার চার্জশিট দিতে গড়িমসি করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান বলেন, এখনো মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। মামলার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখতে একটু বেশি সময় লাগছে। তদন্ত শেষে দ্রুতই চার্জশিট দেওয়া হবে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শওকত হাসানের মালিকানাধীন ‘জামালপুর টুইন টাওয়ার-২’ ভাড়া নিয়ে ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে ইউআইটিএস। এরইমধ্যে ভাটারা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ শেষ হলে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর শুরু হয়। একই সঙ্গে ইউআইটিএস’র উপাচার্যও স্থায়ী ক্যাম্পাসে অফিস শুরু করেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শওকত হাসান ও তার ক্যাডাররা উপাচার্যের কাছে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা ছাড়াও মালামাল স্থানান্তরে বাধা দেন। এ বিষয়ে ২০ নভেম্বর ২০১৯ ভাটারা থানায় একটি জিডি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ সন্ধ্যায় ৫-৬ জন সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে এসে ইউআইটিএস’র উপাচার্যের গাড়ি আটকে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন শওকত হাসান। চাঁদা না পেয়ে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতিও দেখান তিনি।

গত বছরের ২০ নভেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে করা অপর একটি জিডির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে গত ১৫ জানুয়ারি গুলশান এলাকা থেকে শওকত হাসানকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে সেদিন বিকেলেই ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫০০ টাকা বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর হয়।

এদিকে, গত ১৪ জুন জালিয়াতির আরেকটি মামলায় শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় একই সময় দায়েরকৃত অপর একটি মামলায় ভাটারা থানা পুলিশ কর্তৃক সাত মাসেও চার্জশিট না দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।

আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া পিবিআই'র পরিদর্শক (অর্গানাইজড ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন বলেন, অ্যাসার্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত জামালপুর টুইন টাওয়ারের স্বত্বাধিকারী শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে দলিল জালিয়াতি ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান এবং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস’র বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।