ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নেতৃত্ব ও নীতি প্রণয়নে দরকার যুবাদের অংশগ্রহণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
নেতৃত্ব ও নীতি প্রণয়নে দরকার যুবাদের অংশগ্রহণ .

ঢাকা: দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশই যুবা। যাদের বয়স ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে।

বিশাল এই জনগোষ্ঠীর উপর নির্ভর করছে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে যুবাদের অংশগ্রহণের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সে দিকে এখনো বেশ ঘটতি রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে নেতৃত্ব এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তরুণদের অংশগ্রহণকে কখনই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) কালের কণ্ঠ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পিএসটিসির যৌথ আয়োজনে ‘বৈশ্বিক কর্মযজ্ঞে যুবাদের সংযুক্তি’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক নন্দিত কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। সভাটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন মাশফিকা জামান সাটিয়ার।

সভায় বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ১৫-২৪ বছরের মানুষকে যুবা হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের যুবনীতিতে ১৮-৩৫ বয়সকে গণ্য করা হয়। তবে বয়স যাই হোক না কেন, যুবাদের নিয়ে ও সময়োপযোগী নীতি প্রণয়ন করা জরুরি। কারণ যুব সমাজ বদলে গেলে এবং তাদের চিন্তার পরিবর্তন হলে বদলে যাবে একটি সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্ব। তরুণদের অন্তর্ভুক্তি দুইভাবে হতে পারে। একটি হলে স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক এবং অন্যটি বৈশ্বিক থেকে স্থানীয়। এই করোনা পরবর্তী সময়ে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

বরেণ্য কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, একটি জিনিস লক্ষ্য করি এদেশের যা কিছু গৌরবের ইতিহাস তার প্রতিটিই যুব শ্রেণির মাধ্যমে হয়েছিল। ১৯৫২ সালের আন্দোলন শুরু করেছিল যুব সমাজ। তারপর ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থান। এর আগেও যে আন্দোলনগুলো করেছে যুব শ্রেণির ভূমিকাটাই বেশি ছিল। জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে। সেই অর্জনের সিংহভাগ দায়িত্ব ছিল যুব সমাজের উপর। একটি রাষ্ট্রের যুবকেরা যত বেশি শিক্ষিত ও কর্মে দক্ষ হয়, সে দেশ তত এগিয়ে যায়।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির বলেন, ‘একজন শিশুর মননে, শিক্ষায় ও আচার-আচরণে যদি ইতিবাচক বিষয়গুলো বপন করতে না পারি তাহলে পরিবর্তন আসবে। হঠাৎ করে ফল আসবে না। একেক তরুণ একেক সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে। এক দেশে বসবাস করলেও তাদের সংস্কৃতি ভিন্ন হওয়ায় হঠাৎ করেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সে বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিল খুব শিগগিরই গঠিত হবে। ’

পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ২০১১ সালের আদম শুমারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩০ লাখের বেশি। এই জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ যুবা অর্থাৎ ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে আমরা কি বোঝা হিসেবে নেব? নাকি সম্পদ হিসেবে রূপান্তর করবো। এটিই হলো মুখ্য বিষয়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই এই যুবাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘যুবদের কীভাবে আমরা লোকাল ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিতে পারি সেটিই কিন্তু আন্তর্জাতিক যুব দিবস-২০২০এর উপযোগী বিষয়। নীতি এবং কর্মকৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রেও আমাদের ঠিক করতে হবে যে কোন বয়সের জনগোষ্ঠী নিয়ে আমরা কাজ করছি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অভীষ্ট লক্ষ্যগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের যুবাদের নীতি সাজানো উচিত। আমরা কোন ধরণের শিক্ষা দিচ্ছি এবং কত সংখ্যক চাকরি সৃষ্টি করতে পারছি যুবাদের জন্য? বয়স কাঠামো পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই শিক্ষা স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সুশাসনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বেসির সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, ‘নেতৃত্ব এবং নীতি প্রণয়নে তরুণদের আমরা কেন অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি না? আর তরুণরাই বা কেন অংশগ্রহণ করতে পারছে না? অনেকেই বলছেন যে (তরুণদের) অংশগ্রহণ দরকার, অবশ্যই সেটি দরকার কিন্তু সেই অংশগ্রহণটি যেন অর্থবহ হয়। তরুণরা কী চায় সেটি জানাটা খুবই জরুরি। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আরো ভাবতে হবে এবং তরুণদের নিয়ে কার্যক্রমগুলো আরো জোরদার করতে হবে। ’

ইউএনভি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আক্তার উদ্দিন বলেন, যুবরা হচ্ছে একটি দেশের বড় শক্তি। এ দেশের যত কিছু হয়েছে যুবদের হাত ধরেই হয়েছে। আমরা কত শতাংশ যুবদের প্লাটফর্ম করে দিতে পারছি। শুধু জাতীয়ভাবে না আন্তর্জাতিকভাবে কীভাবে যুবদের কাজে লাগানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে আমাদের। বর্তমানে আমাদের প্রচুর যুব সমাজ অনলাইনে কাজ করছে কিন্তু সমন্বয় নেই। বর্তমান সরকার যুবদের নিয়ে খুব পজিটিভ। সারা পৃথিবীতে দেখা গেছে যে সকল যুবরা ভলেন্টিয়ার কাজে জড়িত থাকে পরবর্তীতে তারাই ভালো করছে। ’

অনলাইন আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত, ইউবিআর প্রোগ্রাম ম্যানেজার কানিজ গোফরানী কোরায়শী, পিএসটিসির নবীন পেশাজীবি নাজমুল কবির আল মেহমুদ, সাবা তিনি শিমু, কামরুন্নাহার কনা, তানভীর ইসলাম, নীলিমা নাসরিন প্রমুখ অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
এসই/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।