লালমনিরহাট: করোনার ভয়ে হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর চারিদিকে যখন সমালোচনার ঝড় বইছে, ঠিক তখনই (বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট) স্ট্যান্ড রিলিজ করে ঢাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলমকে।
ভিডিও ভাইরালের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে ভয় দেখিয়ে সাড়ে নয় লাখ টাকার ডকুমেন্টের স্ট্যাম্প গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে স্ট্যাম্পটি উদ্ধারের জন্য লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন শাহানাজ বেগম নামে এক ভুক্তভোগী।
ওই ভুক্তভোগী লালমনিরহাট শহরের বিডিআরগেট খোচাবাড়ি এলাকার নবীয়ার হোসেনের স্ত্রী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান আলীর (সনদ নম্বর ১৮৩০১৬) মেয়ে। তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের রানিং বেয়ারা পদের কর্মরত।
এর আগে ওসি মাহফুজ আলম নিজ কার্যালয়ে বসে হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এ নিয়ে গত সোমবার (১০ আগস্ট) ‘হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ নেন লালমনিরহাটের ওসি মাহফুজ’ শিরোনামে বাংলানিউজে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিডিওসহ সংবাদটি ফলাও করে প্রচারিত হয়। ফলে ওসির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এমনই একজন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বেগম। তিনি বিচার চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তার অভিযোগ, রেলওয়েতে চাকরির সুবাদে শাহানাজ বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয় রেলওয়ের বাহাদুরাবাদ ঘাটের লস্কর তৈয়াবুর রহমান টিপুর। এরই সুবাদে তৈয়াবুর রহমান টিপু শাহানাজের ছেলে সোহানুর রহমান মিমকে রেলওয়েতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কয়েক দফায় নয় লাখ ৫৫ হাজার টাকা নেন। টাকা দেওয়ার প্রমাণ স্বরূপ গত ২০১৫ সালের ১০ মে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন টিপু। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও চাকরি দিতে ব্যর্থ হলে পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে তালবাহানা করায় স্ট্যাম্পমূলে মামলার প্রস্তুতি নেন শাহানাজ।
বিষয়টি বুঝতে পেয়ে টিপু সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম ও তার সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে গত ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর দিনগত রাত ৩টার দিকে শাহানাজের বাড়িতে আসেন। এসময় আপোষ মীমাংসার কথা বলে সাড়ে নয় লাখ টাকা লেনদেনের চুক্তিনামার স্ট্যাম্পটি ওসি মাহফুজ আলম হাতিয়ে নেন এবং তার স্বামী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে আসেন। পরদিন শাহানাজের স্বামী ও ছেলেকে একটি মামলায় জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আপোষ মীমাংসার কাগজে একটি এবং সাদা কাগজে একটি স্বাক্ষর নেন ওসি মাহফুজ আলম। এ বিষয়টি অন্য কাউকে জানালে পুনরায় স্বামী ও ছেলেকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। তাদের ছাড়াতেও ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
ওসি মাহফুজ আলমের হাতে থাকা স্ট্যাম্প উদ্ধার করে প্রতারক টিপুর কাছ থেকে পাওনা টাকা উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, স্ট্যাম্প না থাকায় সব বিক্রি করে দেওয়া সাড়ে নয় লাখ টাকাও উদ্ধার করতে পারছি না। দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান এসপি ভালো মানুষ, তাই তার কাছে বিচার চেয়েছি।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ তো আজকেই দিয়েছেন। আমার হাতে পৌঁছাক। তারপর দেখা যাবে।
আরও পড়ুন:
হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ নেওয়া সেই ওসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ
হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ নেন লালমনিরহাটের ওসি মাহফুজ!
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
এসআই