ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হারমোনিয়াম মানে ‘যতীন অ্যান্ড কোং’

  দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
হারমোনিয়াম মানে ‘যতীন অ্যান্ড কোং’ যতীন অ্যান্ড কোং দোকানের ছবি

ঢাকা: শুরুটা ১১০ বছর আগে। পুরান ঢাকার আমপট্টিতে, এরপর পাটুয়াটুলীতে।

তবে গেলো তিন দশক ধরে শাঁখারীবাজারে। ১৪ নম্বর শাঁখারীবাজার। যারা সঙ্গীতানুরাগী বা সঙ্গীতশিক্ষার্থী, তাদের জন্য বলা যেতে পারে তীর্থস্থান। কারণ, এটি যতীন অ্যান্ড কোং’র শো-রুম। আর বাংলাদেশের সঙ্গীত শিল্পী-শিক্ষার্থীদের জন্য হারমোনিয়াম বলতেই যতীন অ্যান্ড কোং।
 
শত বছর পেরিয়ে গেলেও স্মৃতির পাতায় ভাস্বর হয়ে রয়েছে যতীন অ্যান্ড কোং। সঠিকভাবে রিড ধরতে সুখ্যাত যতীন অ্যান্ড কোংয়ের হারমোনিয়াম। ১৯১০ সালে যার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেরানীগঞ্জের বাগৈরে জন্ম নেওয়া যতীন্দ্র মোহন মণ্ডল। ১৯৭০ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে সুনীল কুমার মণ্ডল আর এখন নাতি সুরজিৎ মণ্ডলের হাল ধরেছেন।
 
যতীন অ্যান্ড কোংয়ের গল্প শুরুর আগে জেনে নেওয়া যাক যতীন্দ্র মোহন মণ্ডল সম্পর্কে। মুনতাসীর মামুনের

‘ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, তার জন্ম ১৮৮০ সালে। দারুণ বেহালা বাজাতেন তিনি। বন্ধু ছিলেন চারণ কবি মুকুন্দ দাসেরও। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁয়ের সঙ্গে রূপলাল হাউজে বেহালা বাজিয়েছেন।
 
যতীন্দ্র মোহন মণ্ডলের গল্প শোনাচ্ছিলেন তার নাতি সুরজিৎ মণ্ডল। তিনি বললেন, হাওয়াটাইট, শুদ্ধস্বরের কারণে যতীন অ্যান্ড কোংয়ের হারমোনিয়াম সবার কাছে প্রিয়। ছায়ানটের সভাপতি সঙ্গীত সন্‌জীদা খাতুন আজীবন যতীন অ্যান্ড কোংয়ের হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করছেন। আর ছায়ানটের সব হারমোনিয়ামও যতীন অ্যান্ড কোংয়ের। আর বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে আমাদের হারমোনিয়াম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিবিষ্টমনে হারমোনিয়ামের কাজ করেছিলেন জনা তিনেক কারিগর। আর তাদের কাজের তদারকি করছিলেন সুরজিৎ মণ্ডল। দোকানের পেছনের হারমোনিয়াম বানানোর কারখানা। সেখানেই কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছিলো নতুন হারমোনিয়াম। আরেকদিকে ব্যস্ততা ছিলো হারমোনিয়াম ঠিক করার।
 
হারমোনিয়াম নিজেদের কারিগরদের দিয়ে বানান বলেও জানান সুরজিৎ মণ্ডল। তিনি বলেন, সহদেব মণ্ডল নামে আমাদের একজন কারিগর রয়েছে। এখন তার বয়স ৭০ বছর। বিগত ৫০ বছর ধরে তিনি আমাদের এখানে হারমোনিয়াম তৈরি করেন। এমন কারিগর আমাদের আরো রয়েছেন। তাদের অভিজ্ঞতার কারণেই আমাদের এখানে নিখুঁত হারমোনিয়াম তৈরি হয়। যা মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
 
এই আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের যুগে হারমোনিয়ামের বিক্রি কেমন? জানতে চাইলে এক গাল হেসে বললেন, বিক্রি আগের চেয়েও ভালো। কারণ, গান শেখার প্রাথমিক শিক্ষাটা হারমোনিয়াম বাজিয়ে হয়। সুতরাং এর চাহিদা সবসময়ই থাকবে।
 
তিনি জানান, প্রাথমিক শিল্পীদের জন্য যে হারমোনিয়াম রয়েছে তার দাম সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকার মধ্যে। এটিই সবচেয়ে বেশি চলে। আর যারা স্কেল পরিবর্তন করে গান তাদের জন্য রয়েছে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের হারমোনিয়াম।
 
হারমোনিয়ামের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও যতীন অ্যান্ড কোংয়ে পাওয়া দেশি-বিদেশি নানা বাদ্যযন্ত্র। যার মধ্যে রযেছে তবলা, গিটার, বেহালা, উইকিলুকি, দোতারা, তানপুরা, একতারা।
 
সুরজিৎ মণ্ডল জানান, হারমোনিয়ামের পর সবচেযে বেশি চলে তবলা। নিমকাঠের তবলা কভার আর হাতুড়িসহ দাম পড়ে সাড়ে ছয় হাজার টাকা। এটাও আমরা নিজেরাই বানাই। তবে গিটার, বেহালা, উইকিলুকি, তানপুরা এসব বাদ্যযন্ত্র ভারত ও চীন থেকে আনা হয়।
 
যতীন অ্যান্ড কোংয়ে অ্যাকুস্টিক গিটার পাওয়া যায় সাড়ে চার হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকায়, ভারত থেকে আনা বেহালা পাঁচ হাজার এবং চীন থেকে আনা বেহালা সাত হাজার টাকা, উইকিলুকি চার থেকে সাত হাজার টাকা, দোতারা আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা, ভারত থেকে আনা তানপুরা ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা, একতারা ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
ডিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।