ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

ঢাকা: দেশের আধুনিক সংবাদপত্রের অন্যতম পথিকৃৎ, মেধাবী ব্যক্তিত্ব সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট)।

২০১৮ সালের এদিনে ৭৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দৈনিক সমকাল ও যুগান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের তিন দশকের বার্তা সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম গোলাম কুদ্দুস মোল্লা ও মা মরহুম সিতারা বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সোচ্চার ছিলেন আজীবন।

দেশের সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব গোলাম সারওয়ার ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সেই থেকে একটানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এ পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চায় নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে তার সাংবাদিকতা পেশার সূচনা। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন নিজ এলাকা বানারীপাড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংবাদপত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বার্তা বিভাগে গোলাম সারওয়ারের সৃজনশীলতা, সংবাদবোধ ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এদেশের সংবাদমাধ্যম জগতে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দৈনিক ইত্তেফাকে দীর্ঘ ২৭ বছর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি একাধারে সৃজনশীল ও পেশাদার সাংবাদিকতায় অতুলনীয় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক পূর্বানীর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। পূর্বানীতে তারই সম্পাদনায় এদেশে ম্যাগাজিন আকারে বৃহদায়তনের ঈদসংখ্যা প্রকাশের রীতি শুরু হয়।

তার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সাপ্তাহিক হিসেবে পূর্বানী অভুতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এসব কৃতিত্বের ধারাবাহিকতায় তিনি দেশের দুটি দৈনিক ‘যুগান্তর’ ও ‘সমকাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেন।  

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক এবং  ২০০৫ সালে দৈনিক সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

তার সুযোগ্য নেতৃত্ব ক্ষুরধার মেধা ও অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতা পত্রিকা দুটিকে দ্রুততম সময়ে পাঠকপ্রিয় করে তোলে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গোলাম সারওয়ার দৈনিক সমকালের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার উৎকৃষ্টতার কারণে গোলাম সারওয়ারকে অনেকেই ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অবিহিত করেন। তিনি ছিলেন এদেশের সংবাদপত্রের সাফল্য ও পেশাদারিত্বের প্রতীক। তিনি বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

সৃজনশীল সাহিত্যে গোলাম সারওয়ারের অকৃত্রিম আগ্রহ ও উদ্যোগ তার সৃষ্টিশীলতা ও প্রাণময়তার আরেক ক্ষেত্র। দৈনিক পত্রিকায় সাহিত্যকে তিনি মানে ও মর্যাদায় স্বতন্ত্র করেছেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার; ষাটের দশকে অসংখ্য ছড়া লিখেছেন। সত্তর দশকেও ছড়ায় সচল রেখেছিলেন নিজের কলম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতে এক সময় তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ। তার লেখা বেশ কয়েকটি গান আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে শিহরণ জাগায়। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ছড়া গ্রন্থ ‘রঙিন বেলুন’ ‘সম্পাদকের জবানবন্দি’, ‘অমিয় গরল’, ‘আমার যত কথা’ এবং ‘স্বপ্ন বেঁচে থাক’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
    
সাংবাদিকতায় জীবনব্যাপী অনন্য ভূমিকার জন্যে ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গোলাম সারওয়ারের এবারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশন’, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান ও স্মরণসভা হচ্ছে না। এদিন দুপুর ১২টায় তার কবরে সমকাল পরিবার শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের পরিবার তার স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।