ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নিয়ম ভেঙে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়েও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২০
নিয়ম ভেঙে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়েও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে

রাজশাহী: রাজশাহীতে এত বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি টাউন সার্ভিস বাস। তাই নেই গণপরিবহনের সেবা।

শহরে চলাচলের জন্য রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাই প্রধান বাহন। তবে বিভাগীয় এই শহর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বাস। এছাড়া চালু রয়েছে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসও।  

করোনা পরিস্থিতির জন্য মার্চের শুরুতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য এসব রুটের বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সরকারি ঘোষণায় আবারো পয়লা জুন থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কোনো পরিবহনেই আর শুরুর মতো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। রাজশাহী-ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রংপুর, খুলনা ও সিলেটসহ বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাসগুলো অংশবিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মানলেও আন্তঃজেলা রুটের বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। অথচ সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করছেন বাস শ্রমিকরা।

স্বাস্থ্যবিধির যে সব শর্ত অনুসরণ করে বর্ধিত ভাড়া আদায়ের কথা বলা হয়েছিল তার কোনোটাই মানা হচ্ছে না। আন্তঃজেলা রুটের বাসগুলোতে সেই পুরনো কায়দায় গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। আবার এই করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের বর্ধিত ৬০ শতাংশ ভাড়ার চেয়েও অধিকাংশ রুটে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে করোনা সংকটে কর্মহীন ও আয় কমে যাওয়া সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত একেবারেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, বাস সার্ভিসের ব্যবস্থাপনায় এই নৈরাজ্য কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাজশাহীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসগুলো শুধু ট্রাফিক আইনের ক্ষেত্রে নয়, যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবহন শ্রমিক নেতারা আসন প্রতি ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়ার দাবি করলেও যাত্রীদের অভিযোগ দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

..করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দুই মাস বন্ধ থাকার পর সংক্রমণ আতঙ্কের মধ্যেই গত পয়লা জুন সকাল ৬টা থেকে সারাদেশের মতো রাজশাহীতে শুরু হয় বাস চলাচল। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে, প্রশাসন ও পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। আর বাস চলাচল শুরুর দিকে বিষয়টি মনিটরিং করা হলেও এখন তা নেই!

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহীতে দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে অংশ বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও আন্তঃজেলা রুটের বাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আন্তঃজেলা রুটে সেই গাদাগাদি করেই যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

মহানগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী প্রতিটি বাসের মোট আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। যাত্রা শুরুর আগে প্রতিটি বাসেই করা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। এছাড়া বাসের টিকিট কাউন্টারেও করা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। বাস ও কাউন্টারে প্রবেশের আগে শরীরের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে কাউন্টারে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন>>>৯০ শতাংশ ভাড়া বেশি গুনেও উল্টো নাজেহাল যাত্রীরা!
                   >>>আসন ফাঁকা নেই, তবুও বাড়তি ভাড়া আদায় গণপরিবহনে 


এছাড়া মহানগরের ভদ্রা স্মৃতি অম্লান চত্বর বাসস্ট্যান্ড ও মহানগরের গৌরহাঙ্গা রেলগেট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটের বাস ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। বাসস্ট্যান্ডে থাকাকালে দুই সিটে একজন যাত্রী নেওয়া হলেও শহর পার হতেই পাশের সিটেও লোক বসানো হচ্ছে। আর রাজশাহী জেলা এলাকা পার হতেই লোক দাঁড়াচ্ছে দুই সারির সিটের মাঝখানে! আর বাড়তি ভাড়া নিয়ে তো সাধারণ যাত্রীদের ক্ষোভ রয়েছেই।

মহানগরের গৌরহাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী যাত্রী আলমগীর কবীর বাংলানিউজকে বলেন, আগে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে গেটলক ও মহানন্দা বাস সার্ভিসের ভাড়া ছিল ৭০ টাকা। করোনাকালে সেই ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১০ টাকা।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১২০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। অন্যদিকে আগে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১১০ টাকা। সেই ভাড়া এখন বাড়িয়ে ১৫৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এর ওপর যেতে যেতে সিটের বাইরেও লোকজন তোলা হচ্ছে দেদারসে! এখন যে স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে এই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সেই স্বাস্থ্যবিধিই যদি না মানা হয় তাহলে বাড়তি ভাড়া কেন নেওয়া হচ্ছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ওদিকে, রাজশাহী-নওগাঁ রুটের যাত্রী জয়নাল হোসেন বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, আগে রাজশাহী থেকে নওগাঁ যেতে বাস ভাড়া লাগতো ১২০ টাকা কিন্তু এখন একজন যাত্রীকে ১৯০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তোলা হচ্ছে। যাত্রীরা কেউ বাধা দিলেই বাস শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন।  

এদিকে, যাত্রী পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও ভাড়া প্রশ্নে ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী বাস ন্যাশনাল ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন কাজল বাংলানিউজকে বলেন, আংশিক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার বিষয়টি ঠিক নয়। বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে নেই।

আর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে।

তবে আন্তঃজেলা রুটের বাসগুলোতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও এসময় স্বীকার করেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২০
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।