ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অংশ হিসেবে প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাস বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম এবং তাদের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
শনিবার (৮ আগস্ট) দূতাবাসের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।
দূতাবাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দূতাবাসের সকল সদস্য এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি একসঙ্গে ব্যক্তি উপস্থিতি ও ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রবাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও গুণীজন অনলাইনে অংশগ্রহন করেন।
রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তার বক্তব্যের শুরুতেই সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এছাড়া তিনি ১৫ আগষ্টের ভয়াল কাল রাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে স্নেহময়ী, মমতাময়ী মা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি ছিলেন চিরায়ত বাঙ্গালি নারীর আদর্শ প্রতিকৃতি। তিনি আরও বলেন, বঙ্গমাতা কেবল জাতির পিতার সহধর্মিনীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সঙ্গী, বাঙ্গলির মুক্তি সংগ্রামের সহযোদ্ধা। মহীয়সী এ নারী জাতির পিতার রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে আজীবন বঙ্গবন্ধুকে সাহস যুগিয়েছেন ও পাশে থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করে গেছেন।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন কোমল হৃদয়ের দৃঢ়চেতা নারী, যিনি কোনো বিপদেই ধৈর্য হারা হননি। সীমাহীন ধৈর্য, বিচক্ষণতা ও সাহসের সঙ্গে তিনি সকল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গমাতার অবদান অপরিসীম। তার ত্যাগ, প্রজ্ঞা, মানবিকতার কারণে এ মহীয়সী নারী বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি বঙ্গমাতার জীবন, কর্ম ও ত্যাগ বাঙালি নারী জাতি তথা সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেন।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল সম্পর্কে বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত তাকে তারুণ্যের মূর্ত প্রতীক- নানা গুণে গুণান্বিত দেশপ্রেমিক যুবক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একাধারে একজন তুখোড় ক্রীড়াবিদ, দক্ষ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, সংগীত ও অভিনয়শিল্পী, একজন একনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী ও সর্বোপরি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের ফুটবলের আধুনিকতার জনক হিসেবে শেখ কামালকে আখ্যায়িত করে মান্যবর রাষ্ট্রদূত তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন ও উদ্যোগী হয়েছিলেন, তারই সফল বাস্তবায়ন ঘটেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান স্বরণীয়।
এ প্রসঙ্গে, ঢাকা থিয়েটার ও স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠি প্রতিষ্ঠাসহ একাধিক উদ্যোগে তার অগ্রণী ভূমিকার কথা রাষ্ট্রদূত স্মরণ করেন।
একজন সৃজনশীল প্রাণদীপ্ত, অসাধারণ দেশপ্রেমিক যুবক হিসেবে শহীদ শেখ কামাল আগামী প্রজন্মের জন্য আদর্শ ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন বলে রাষ্ট্রদূত দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সেইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের প্রবাসী বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, জাতির পিতার সংগ্রামী ও ত্যাগি জীবন, বিশেষ করে শহীদ শেখ কামালের জীবনকর্ম তুলে ধরতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল এর ওপর নির্মিত দুইটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২০
টিআর/ওএফবি