লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে গত তিন দিনের অস্বাভাবিক জোয়ারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ছয় ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রাম জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত।
মেঘনা নদীর জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট বেড়েছে। জোয়ারে বসতঘরেও উঠেছে কোমর পানি। বুধবার থেকে শুক্রবার তিন দিনের জোয়ারে উপজেলার চর কালকিনি, সাহেবেরহাট, চর ফলকন, চর মার্টিন, চর লরেন্স ও পাটারিরহাট ইউনিয়নে বিপর্যয় নেমে আসে।
এ উপকূলের শত শত পরিবার এখনও পানিবন্দি। জোয়ারের পানিতে তুলিয়ে গেছে রান্নার চুলা, জ্বালানি কাঠ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এমন পরিবারগুলোতে এখন রান্না বসানো সম্ভব হচ্ছে না। জোয়ারের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তঘরের মেঝের মাটি চলে গেছে স্রোতের টানে।
উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এখন জোয়ার আতঙ্কে। যে কোনো মুহূর্তে ভেসে যেতে পারে বিস্তীর্ণ জনপদ। অরক্ষিত কমলনগরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিদিন জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যায়। গত তিন দিনের জোয়ারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চলতি মৌসুমের আউস ধানের মাঠ ও বীজতলার। ঘের ও পুকুর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু ও হাস-মুরগির খামার পানিতে ডুবে গেছে, মারা গেছে পাঁচ হাজার মুরগি।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, জোয়ারের পানিবন্দি পরিবারগুলোর দুর্ভোগ ও দুঃখ-কষ্টের অন্ত নেই। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের রান্নার চুলা ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বসতভিটের মাটি জোয়ারে নিয়ে গেছে। তাদের কাছে পৌঁছেনি সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য। একই চিত্র চর কালকিনি, সাহেবেরহাট ও চর লরেন্স এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলোর।
জানা যায়, উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় চর কালকিনি, সাহেবেরহাট, চর ফলকন, পাটারিরহাট, লরেন্স ও চর মার্টিন ইউনিয়নের কাঁচা-পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
চর কালকিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ, সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ও ফলকন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে তাদের এলাকায় চলাচলের রাস্তায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক সড়ক। এছাড়াও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফসল ও কাঁচা ঘরবাড়িরও ক্ষতি অনেক বেশি।
কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান ওমর ফারুক সাগর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি বলেন, কমলনগরে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ার এলেই ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। গত তিন দিনের অস্বাভাবিক জোয়ারে রাস্তাঘাট, কাঁচা ঘরবাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২০
এসআর/এএ