ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ভিড় বাড়লেও বাড়েনি বিক্রি, ছোট-মাঝারি গরু চাহিদার শীর্ষে

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
ভিড় বাড়লেও বাড়েনি বিক্রি, ছোট-মাঝারি গরু চাহিদার শীর্ষে

রাজশাহী: দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। আর মাত্র একদিন।

কোরবানির পশু কেনার জন্য হাতে একদমই সময় নেই। করোনাকালেও শেষ সময়ে ভিড় বাড়ছে রাজশাহীর পশুর হাটগুলোতে। তবে হতাশাও রয়েছে। যে তুলনায় ভিড় বেড়েছে সেই তুলনায় বাড়েনি বিক্রি! 

হাটে যারা আসছেন তাদের বেশিরভাগ মানুষ এখনও দরদাম করেই চলে যাচ্ছেন। তাদের ধারণা করোনার জন্য শেষ মুহূর্তে পানির দামে কোরবানির পশু বিক্রি হবে এবার। আর যারা কিনছেন তারা ছোট ও মাঝারি গরুই কিনছেন। বেশি দাম হাঁকায় বড় গরুর দিকে তেমন কেউই ভিড়ছেন না।  

ফলে এরই মধ্যে হাটে বড় গরু নিয়ে আসা খামারিদের মাথায় হাত পড়েছে। আজ-কালের মধ্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে তাদের চোখের পানি নিয়েই এবছর পশুর হাট ছাড়তে হবে। যদিও ক্রেতাদের বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার হাটে গবাদি পশুর দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগরীর সর্ববৃহৎ পশুর হাট সিটিহাট ছাড়াও উপকণ্ঠে থাকা পবার নওহাটা, দামকুড়া, কাঁটাখালীতে হাট রয়েছে। এছাড়াও জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট, ঝলমলিয়া হাট, গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট ও মহিষালবাড়ি হাট, বাগমারার ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুর হাট, দুর্গাপুর হাট, মোহনপুরের কেশরহাট ও সাবাইহাট, তানোরের চৌবাড়িয়া ও মুণ্ডুমালা হাট উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর হয়ে উঠছে এসব পশু হাট। এত দিন যাচাই-বাছাই চললেও এখন শুরু হয়নি মূল কেনাবেচা। ফলে প্রায় মাস শেষেও পুরোদমে জমে ওঠেনি পশু হাটগুলো।

রাজশাহীর সিটিহাটসহ বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সাইজের গরু, মহিষ, ছাগল রয়েছে। এর মধ্যে দেশি গবাদি পশুর সংখ্যাই বেশি। বেশিরভাগ গরুই এসেছে রাজশাহীসহ আশপাশের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে। সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এবার সেভাবে ভারতীয় গরু ঢোকার সুযোগ পয়ানি। তবে শেষ সময়ে নদী হয়ে ভারতীয় গরুও এখন আসছে রাজশাহীতে।

আর পশুহাটে যারা কোরবানির জন্য গরু নিয়ে এসেছেন তাদের অধিকাংশই বাড়িতে বা খামারে লালন-পালন করা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এসব খামারিরা বাড়িতে গরু পালন করেন। যা কোরবানির মৌসুমে হাটে বিক্রি করেন। স্থানীয় খামারিদের পাশাপাশি কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ব্যাপারীরাও পশু নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য।

এবছর ভারতীয় গরু কম থাকায় হাটগুলোতে দেশি গরুর দাম চড়া বলছেন খামারিরা। এছাড়া গোখাদ্যের দামও বেশি। তাই লালন পালনে খরচ বেড়েছে। দাম বেশি না বলে উপাই নেই।  

এদিকে, কোরবানির পশু হাটে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ গতবারের তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি। বিভিন্ন পশু হাটে কোরবানির পশু কিনতে এসে ক্রেতারা জানান, ছোট সাইজের গরুর দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের গরু ৭০ থেকে ৯০ হাজার ও বড় সাইজের গরু ৯০ থেকে এক লাখ ২০ হাজার এবং কিছু গরুর দাম তারও ওপরে হাঁকানো হচ্ছে শেষ সময়ের পশু হাটে। আজ সিটি হাটে ছোট ছাগলের দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের ছাগলের দাম ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা ও বড় সাইজের ছাগলের দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে।

পাশের উপজেলা পুঠিয়া থেকে রাজশাহীর সিটি হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছিলেন সাইফুল আলম। তিনি বলেন, রাজশাহীর হাটগুলোতে তুলনামূলকভাবে ভারতীয় গরু আসেনি। এরপর বছরব্যাপী ধানের গুঁড়া, ভুসি, নালিসহ বিভিন্ন উপাদান কেনা ও শ্রমিক দিয়ে গরুর পরিচর্যা করতে গিয়েই প্রায় এক লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। এরপরও করোনাকাল। তাই দাম একটু বেশিই।

রাজশাহীর সিটি হাটে গরু কিনতে আসা চণ্ডিপুর এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, শেষ সময়ে হাটজুড়ে দেশি গরুর আধিক্য। তবে দামও চড়া। এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এর ওপর বিক্রেতারা শেষ সময়েও দামে ছাড় দিচ্ছেন না। তিন থেকে চার মণ ওজনের গরুর দাম লাখ টাকা ওপরে হাঁকা হচ্ছে। আর হাটে বড় গরুর চাহিদা একবারেই কম।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু কেউই শুনছেন না। আর শেষে সময়ে কাউকে বিষয়টি মানানোও যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে এর মধ্যে দিয়ে হাট জমতে শুরু করেছে। ভিড় বাড়ছে। শেষ সময়ে বিক্রিও বাড়বে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
এসএস/এএ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।