ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মাসেতু নির্মাণে ১৩টি দুর্বল দিক চিহ্নিত

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২০
পদ্মাসেতু নির্মাণে ১৩টি দুর্বল দিক চিহ্নিত পদ্মাসেতু। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলাদেশে স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মাসেতু। শুরু থেকে পদ্মাসেতু সারা দেশের মানুষের কাছে একটা স্বপ্নের নাম।

এই স্বপ্ন তিল তিল করে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। স্বপ্নের সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই নানা দুর্বল দিক চিহ্নিত করেছে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। একটি প্রতিবেদনে সেই দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।  
 
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল দিকের পাশাপাশি পদ্মাসেতুর ঝুঁকি চিহ্নিত করে সেতু বিভাগকে জানানো হয়েছে। যাতে করে দ্রুত সময়ে ঝুঁকি মোকাবেলা করা হয়। একই সঙ্গে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন একই ধরণের দুর্বল দিক না আসে।  
 
আইএমইডির সহকারী পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টর ২) মশিউর রহমান খান মিথুন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।
  
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রকল্পের ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু দুর্বল দিকও চিহ্নিত করেছি। এছাড়া সেতুটির কিছু ঝুঁকি পেয়েছি। এসব ঝুঁকি ও দুর্বল দিকগুলো সেতু বিভাগকে জানানো হয়েছে। যাতে করে দ্রুত সময়ে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। খসড়া প্রতিবেদনটি বই আকারেও সেতু বিভাগকে দেওয়া হবে। ’
 
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মাসেতু নির্মাণে প্রধান দুর্বল দিক হচ্ছে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করা এবং বার বার প্রকল্প পরিচালক বা উপপ্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, কাজের তুলনায় কম বরাদ্দ, প্রকল্পের কাজ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করা, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, বাৎসরিক কর্ম পরিকলাপনা প্রস্তুত ও বাস্তবায়ন না করা, মালামাল ক্রয় জটিলতা ও দীর্ঘসময় ব্যয়, বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত মনিটরিং না করা, ত্রুটিপূর্ণ নকশা, প্রকল্পের এক্সিট প্ল্যান, পরিবেশগত ঝুঁকি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

প্রকল্পটির ঝুঁকি হিসেবে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো- প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রকল্পের কাজের পরিবেশের ভারসাম্যতার প্রভাব। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি। নদীর পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক গতি নিয়ন্ত্রণের কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং খরস্রোতা পদ্মার পানিপ্রবাহ প্রকল্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

আইএমইডি প্রতিবেদনে প্রকল্পের কিছু সুযোগ উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। স্থানীয়ভাবে নানা ধরণের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে। উন্নত শিক্ষা লাভের সুযোগ, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে জনগণের আয় বৃদ্ধি পাবে।
 
আইএমইডি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে। প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুসারে মুদ্রার বিনিময় হার ছিল ১ ডলার সমান বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৯ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে মুদ্রার বিনিময় হার দেখানো হয়েছে ৭৮ টাকা ৪০ পয়সা। এখন প্রায় ৮৫ টাকা ছাড়িয়েছে।

মূল সেতুর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। নদীশাসনে ৫ হাজার ১২ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়। অন্যদিকে মাওয়া প্রান্তে অতিরিক্ত ১ দশমিক ৩০ কিলোমিটার নদীশাসন কাজে আরও ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
আইএমইডির প্রতিবেদনে প্রকল্পের নানা ধরনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় পদ্মাসেতু প্রকল্প। এটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হবে এবং এর ফলে দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইলসহ কিছু কাজে সময় ক্ষেপন হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঠিকাদারের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। শুরুতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির কিছুটা অভাব ছিল। এখন কাজের অগ্রগতি ভালো। রেল লাইনের কাজ চলমান। ইতোমধেই ৮টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে দুটি কাজ প্রায় সমাপ্ত। অন্যান্য রেল স্টেশনের পাইলিং কাজ চলমান। ট্র্যাক নির্মাণের কাজ সরেজমিনে এখনো শুরু হয়নি। এই প্রকল্পের রেললাইনের কাজ বেশ পিছিয়ে আছে যা মাত্র ৫৪ শতাংশ। এখানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ জনবল নিয়োগ করে টার্গেট অনুয়ায়ী ঠিকাদারদের নিকট থেকে কাজ আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছে আইএমইডি।
 
১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। পরে ২০০৩-০৫ সালে জাইকার মাধ্যমে পরিচালিত সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটির মূল ডিপিপি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের মধ্যেই বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করা হয়। এর পরে সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। নদীশাসনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সময়সীমা আবার বাড়িয়ে করা হয় ২০২১ সালের জুন মাস। কয়েক ধাপে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও সময় চাওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আইএমইডির সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান খান মিথুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সেতু বিভাগ আরও সময় চাচ্ছে পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পে। তবে আমরা বলেছি, নির্দিষ্ট মেয়াদেই সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad